অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যতই সমালোচনা হোক না কেন ব্যাংক আমানতের উপর নতুনভাবে ধার্য্য করা আবগারি শুল্ক বা ১৫ শতাংশ ভ্যাটের হার কমানো হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, ভ্যাটের বিষয়টি অনেক আগে থেকেই ঝুলে ছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট মদন মোহন কলেজ সরকারিকরণ উপলক্ষ্যে সরকারের কাছে সম্পত্তি হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুহিত একথা বলেন।
গত ১ জুন সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের যে বাজেট অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন তাতে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ব্যাংক হিসাবে একটি নির্দিষ্ট পর্যায় থেকে আবগারি শুল্ক বাড়ানো এবং নিত্যপণ্য ছাড়া সব পণ্যে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের বিষয়টি।
অর্থমন্ত্রীর নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী এক লাখের ঊর্ধ্ব থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব থেকে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
একইভাবে ১০ লাখ ঊর্ধ্ব থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত দেড় হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা, তৃতীয় স্তরে এক কোটির বেশি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত সাত হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা এবং পাঁচ কোটি ঊর্ধ্ব তার বেশি জমার ক্ষেত্রে ১৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী অবশ্য ২০ টাকার টাকার বেশি এবং এক লাখ টাকা পর্যন্ত যে ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক ছিল, সেটি তুলে নিয়েছেন। ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ অনেকটাই স্বস্তি পাবে। এটি নিয়ে অবশ্য তেমন কোনো আলোচনা নেই।
অর্থমন্ত্রীর এই প্রস্তাব দেশ জুড়ে বিতর্কের তৈরি করেছে। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি জাতীয় সংসদেও আগের হারে ফেরার দাবি উঠেছে। সরকারি দলের সংসদ আলী আশরাফ এমনও বলেছেন, ‘কয় টাকা পাবেন, আতঙ্ক তো সারাদেশে ধরিয়ে দিলেন।’
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনায় যোগ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনও।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এরই মধ্যে সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, আবগারি শুল্কের প্রস্তাব সংশোধন হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাজেট প্রস্তাবে কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করা হবে।
তবে সিলেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আবগারি শুল্ক কমানোর সুযোগ নেই। তবুও এ বিষয়ে সংসদে আলোচনা শেষে তা পাস হবে।’
প্রস্তাবিত বাজেটের আরেক আলোচ্য বিষয় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন একাধিক সংসদ সদস্যও। তাদের আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত জনগণের ওপর চাপ বাড়াবে এবং এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কমবে।
তবে অর্থমন্ত্রী এ ক্ষেত্রেও পিছু হটতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে এ বিষয়টি ঝুঁলে আছে। গত বছর তা বাড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম, হয়নি। কিন্তু এবার কোন ভাবেই ভ্যাটের হার কমানো হবে না।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত আনোয়ার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, মদন মোহন কলেজের অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।