হতাশা নিয়ে কাপড়-চোপড় আর প্রসাধনীর সামাহার নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছরের মতো এবারও মনোরম সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম শহরের ঈদের বাজার ও বিপনিগুলো। কিন্তু এখনো দেখা নেই ক্রেতার।
নগরীর শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী নুরুল আলম গালে হাত দিয়ে চিন্তায় মগ্ন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১০ রোজা যাচ্ছে আজ। ঈদের কেনাকাটার ধুম থাকে এসময়। কিন্তু এবার ছন্দপতন।
তিনি বলেন, বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের ধকল গেল সবে। এর সাথে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। মনে করেছিলাম এসবের প্রভাবে ক্রেতা আসছে না। এখন বৃষ্টি কমলেও নগরজুড়ে কাঁদার কারনে ক্রেতারা বের হতে পারছেন না। দু‘একজন ক্রেতা আসলেও বিদ্যুত বিভ্রাটে বেচাকেনা সম্ভব হচ্ছে না।
একই কথা বলেছেন নগরীর অভিজাত শপিংমল মিমি সুপার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী আজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রতিবছর এ সময়ে ক্রেতার ভীড় থাকে। কিন্তু এবার মার্কেটের সব ব্যবসায়ীরা গালে হাত দিয়ে ক্রেতার দিকে পথ চেয়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফুটপাত থেকে অভিজাত মার্কেট। সবখানে যেন পোশাকের বাহার। ঈদ উপলক্ষে জামাকাপড় বিক্রি করার জন্য বেশ প্রস্তুতি নিয়েই বসেছেন ব্যবসায়ীরা। পোশাকে যেমন বৈচিত্র আছে তেমনি আছে দামেও। কেউ প্রস্তুতি নিয়ে বসেছেন উচ্চবিত্তের কেনাকাটার টার্গেট নিয়ে। কেউবা মধ্য ও নিম্মবিত্তের জন্য। নগরীর মার্কেটগুলোকে বিভিন্ন ধরনের লাইটিংয়ে সাজানো হয়েছে ক্রেতা আকর্ষণে। ফুটপাতের দোকানগুলোকেও আকর্ষণীয় করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর দুইটি বৃহত্তম পাইকারী কাপড়ের বাজার রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও টেরিবাজার এখন ঈদের পোষাকে সয়লাব। কিন্তু সেখানেও থমকে আছে কেনাকাটা। তবে সোম ও মঙ্গলবার বৃষ্টি কমায় দুটি বাজারে ক্রেতা সমাগম হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে ফুটপাতে বসা হকারদের অবস্থাও নাজুক। সকাল-বিকেলের বৃষ্টি তাদেরকে ভোগাচ্ছে বেশি। অনেকে ধারকর্য করে এবার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন লাভের আশায়। কিন্তু এখনো প্রায় ব্যবসাহীন অবস্থায়। সবমিলে ব্যবসায়ীদের মেজাজ চড়া।
ব্যবসায়ীরা বৃষ্টি আর বিদ্যুতের কথা বললেও ক্রেতারা বলছেন অন্য কথা। কেউ বলছেন অর্থাভাব, কেউ বলছেন, মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের পকেট কাটার কথা। কেউ বলছেন চাকুরিজীবিদের বেতন-বোনাস না পাওয়ার কথা।
নগরীর কালামিয়া বাজার থেকে টেরিবাজারে কাপড় কিনতে আসা ক্রেতা মসিউদ দৌলা বলেন, বৃষ্টি তো সাময়িক। মুল কথা হচ্ছে মানুষের পকেটে টাকা নেই। মানুষের এমনিতে আয় কম। তারমধ্যে সরকারের ট্যাক্স ও সরকারি লোকজনের চাঁদা, আছে পুলিশের থাবা। এসব দিতেই পেটের খাবার জুটে না যাদের তাদের আবার ঈদের কেনাকাটা।
তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা করছে দখলবাজ, চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, ঘুষখোর, ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। আর করবে সরকারি চাকুরিজীবিরা। কিন্তু তারা এখনো বেতন-বোনাস পাননি। তাই ঈদের বাজারে তেমন ক্রেতা নেই এখনো।
নগরীর চকবাজার কাপাসগোলা এলাকার নুরুল আবছার বলেন, কেনাকাটা হচ্ছেনা তা নয়। তবে শপিং সেন্টার, মিমি সুপার মার্কেট, নিউমার্কেটের মতো অভিজাত মার্কেটে ক্রেতা যাচ্ছে না। কারণ এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের পকেট কাটে। দুই হাজার টাকার কাপড় ১৫ হাজার টাকা বিক্রী করে। যারা একবার এদের শিকার হয়েছে তারা এখন সেখানে কেনাকাটা করে না। তাই মাছি মারছে এসব মার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ স¤পাদক আবদুল মান্নান এ ব্যাপারে বলেন, নগরীর কাপড়ের পাইকারী মার্কেট হচ্ছে টেরিবাজার। সব মার্কেটে টেরিবাজারের কাপড় বিক্রী হয়। কিন্তু টেরিবাজারে চেয়ে চারগুল-পাঁচগুণ বেশি মূল্য নেই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এ কারনে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মার্কেট থেকে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মোরাদ আলী বলেন, ক্রেতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার মিমি সুপার মার্কেটে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়। এ সময় অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের প্রমাণও পাওয়া গেছে। তবে প্রথমবারের মতো অভিযান পরিচালনায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়নি। সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ী নেতারা অঙ্গিকার করেছেন, কাপড়ে ২০ শতাংশের বেশী লাভ তারা করবেন না। তার চেয়ে বেশি লাভ যদি কেউ করে তাহলে ব্যবসায়ী নেতারাই ব্যবস্থা নেবেন। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেতাদের সহযোগিতা করবো।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা রাহমান বলেন, ক্রেতারা যাতে তাদের অভিযোগগুলো জমা দিতে পারে সেজন্য মার্কেটে অভিযোগ বক্স রাখতে বলা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে কাপড়ের দাম স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে শপিং মলগুলোতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে।