১১টায় ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলন সকাল দশটা থেকে ওভাল স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া দল প্র্যাকটিস করবে। মাশরাফিদের প্র্যাকটিস দুপুর দুইটা থেকে, সংবাদ সম্মেলন দেড়টায়। আজও একটা ব্যস্তদিন আমার সামনে।

বাসা থেকে রওয়ানা দিয়েছি সকাল নয়টার দিকে। রবিবারের সকাল, তাই রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা। তবে অন্য ছুটির দিনের চেয়ে আজকের সকালটা আলাদা মনে হলো। চারদিকে থমথমে ভাব। কারও মুখে হাসি নেই। পুরো লন্ডন শোকে আহত।

বাসে উঠে বসলাম ষাটোর্ধ্ব এক ব্রিটিশ ভদ্রলোকের পাশে। লন্ডনে বাসে উঠলে অবশ্য ব্রিটিশদের চেয়ে বিদেশিদেরই বেশি দেখতে পাবেন। ২০ জনের মধ্যে হয়তো ১৪-১৫ জন থাকবে বিদেশি।

রাতে লন্ডন ব্রিজের কাছে ব্যস্ত এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় আট জন নিহত হয়েছে, আহত আরও অন্তত ৪৮ জন। ম্যানচেস্টার হামলার রেশ কাটতে না কাটতে আরেকটি বড় হামলা। মাস দুয়েক আগে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে হয়েছিল আরেকটি হামলা। এ লেখা যখন লিখছি তখনও লন্ডন ব্রিজ হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। তবে এটা যে উগ্রবাদী গোষ্ঠী আইএসআইএস  এর আরেকটা ন্যক্কারজনক অপকর্ম সেটা ধরেই নেওয়া যায়।

ব্রিটিশরা ভীষণ বিনয়ী। পাশের সিটের ভদ্রলোক আমাকে হাসিমুখে গুড মর্নিং জানালেন। মিস্টার পলহিউম্যান নামের এই ভদ্রলোক ক্রিকেট ভক্ত। ক্রিকেট পছন্দ করেন। ক্রিকেট এবং বাংলাদেশ নিয়ে তার সঙ্গে কথা হলো।

কথা হলো বাংলাদেশ-অস্ট্রলিয়া ম্যাচ নিয়ে। তিনি বাংলাদেশকে শুভকামনা জানালেন। জানালেন, গতরাত থেকে তার মন খারাপের কথা। বারবার সন্ত্রাসী হামলায় অন্য সবার মতো তিনিও সন্ত্রস্ত এবং মর্মাহত। জনালেন, রাস্তায় বের হতে তিনি অনিরাপদ বোধ করেন এখন।

আমি তাকে বললাম, ‘অমিও মুসলিম। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। যারা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত তারা আসলে মুসলিম নয়। তারা বিকৃত মস্তিষ্কের বিপদগামী উগ্রবাদী গোষ্ঠী। তাদের কোনও মানবতা নেই, ধর্ম নেই। তারা নাম ব্যবহার করে ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি নষ্ট করার মিশনে নেমেছে। তিনি আমার কথা মেনে নিলেন’।

ওভাল স্টেডিয়ামে পৌঁছে অন্যদিনের সঙ্গে পার্থক্য বুঝতে পারলাম। একেবারে থমথমে অবস্থা। আগের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কিন্তু কেউ কোনও হয়রানি বা বাড়াবাড়ির শিকার হয়নি। প্রেসবক্সে এসে দেখি, পুরো ফাঁকা। মাত্র দুই-তিনজন সাংবাদিক। বেশিরভাগ সময়মতো এসে পৌঁছাতে পারেননি। কারণ অনেকগুলো রেল স্টেশন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল রাত থেকে সকাল পর্যন্ত। লন্ডন ব্রিজের আশপাশের এলাকায় এখনও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে আছে। বন্ধ রাখা হয়েছে ওখানার রেল স্টেশন।

লন্ডন সিটির লোক সংখ্যা ৮০ লাখের উপরে। এর মধ্যে ১০ লাখ প্রায় মুসলমান। ম্যানচেস্টারে হামলার পর এর একজন মুসলিম কোনও ব্রিটিশ কর্তৃক তিরস্কারের শিকার হয়েছেন বলে কেউ বলতে পারবেন না। কোনও মুসলিমকে কোনও অবস্থায় কোনোরকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়নি এর জন্য।

এখানেই ট্রাম্পের দেশ আমেরিকার সঙ্গে ব্রিটেনের পার্থক্য। গ্রেট ব্রিটেন আসলেই গ্রেট। এখানে জাতি ধর্ম, বর্ণের কোনও ভেদাভেদ নেই।

তবে বারবার মুসলিম নামধারীদের সন্ত্রাসী হামলায় কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে এখানে বসবাসরত মুসলিম সম্প্রদায়কে। তারা লজ্জিত এবং বিব্রত। যদিও সরকার, পুলিশ থেকে কোনোরকম চাপ বা হয়রানি নেই তাদের উপর।

গত রাতের সন্ত্রাসী হামলার পর মূলত শোকে মূহ্যমান হয়েছে পড়েছে লন্ডন সিটি। এর প্রভাব পড়বে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচেও। যদিও ইতোমধ্যে সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। গ্যালারি ভরে যাবে ঠিকই, দর্শকদের খেলা দেখতে হবে আহত মন নিয়ে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031