ন্যায়বিচারের প্রতীক লেডি জাস্টিসিয়ার ভাস্কর্যটি রাতের আঁধারে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে যখন অপসারণ করা হচ্ছিল, তখন ভাস্কর মৃণাল হক উপস্থিত ছিলেন সেখানে। হতাশ কণ্ঠে কথা বলছিলেন সাংবাদিকদের সাথে। বলেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে ভাস্কর্য অপসারণ করার জন্য তার ওপর চাপ আছে। তবে কোথা থেকে এই চাপ এসেছে তা বলেননি। শুধু বলেছেন, “আমরা আজ হেরে গেলাম!”

গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন একদল ওলামার সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তাদের দাবি ছিল এটি একটি গ্রিক দেবীর মূর্তি। কিন্তু ভাস্কর মৃণাল হক বলছেন, এটা গ্রিক দেবী নয়, শাড়ি-চুড়ি পরানো বাঙালি নারীর অবয়ব।

ভাস্কর্যটি অপসারণের সময় মৃণাল হক বলেন, “আমাকে এই ভাস্কর্যটি অপসারণ করতে চাপ দেয়া হয়েছে। এটি বানাতে আমার সময় লেগেছিল প্রায় ২ মাস। এখন কেউ কারও প্রয়োজনে তাদের স্বার্থে ভাস্কর্যটি সরাচ্ছে।  আজ স্বাধীনভাবে কথা বলা যাচ্ছে না। আজ আমরা হেরে গেলাম। আমরা বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে হার মানলাম। এর থেকে বড় পরাজয় আমাদের আর কিছু আছে? ”

আক্ষেপ প্রকাশ করে মৃণাল হক আরও বলেন, “এজন্যই কি আমরা স্বাধীনতা এনেছিলাম? এদের বিরুদ্ধেই আমরা আন্দোলন করে স্বাধীনতা এনেছি। আমরা মনে হচ্ছে আমরা সেই স্বাধীনতাটা ভোগ করতে পারছি না, পারব না। আজকে তারাই বিজয়ী। এই রাজাকার আলবদর যারা আজকে আমাদের সাংস্কৃতি, পড়ালেখা সবকিছু বিরোধিতা করে আসছে তাদের কাছে আমরা হার মানব কেন? এটাতে হার মানতে হবে না। ”

ভাস্কর্যটি সরাতে কোন মহল থেকে চাপ এসেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি অতি সাধারণ মানুষ। এত বড় কথা বলার সাহস আমার নেই। সোজা কথা যেটা বুঝি সেটা হচ্ছে স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশিদের জন্যে গালে জুতার বাড়ি খাওয়ার মতো এটা একটা খারাপ ব্যাপার। যার থেকে লজ্জা আর হতে পারে না। অনেক স্বাধীনতাকামী মানুষ এটার পক্ষে বক্তব্য দিয়েছে। আজকে আমি বক্তব্য দেব কাল থেকে আমার রাস্তায় চলা বন্ধ। আমাদের এত বড় একটা পরাজয় আর হতে পারে না।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031