কক্সবাজার, চকরিয়া থেকে সীতাকুণ্ড উপজেলায় ইয়াবা পাচার হচ্ছে সমানতালে। সীতাকুণ্ডে ইয়াবা ব্যবসায়ী ও এতে আসক্ত লোকের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। গত দুই মাসে ১৫টি অভিযানে প্রায় এক লক্ষ ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব এবং পুলিশ। এতে আটক হয়েছে ১৫ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনে করে ইয়াবা পাচার করছে সীতাকুণ্ডে। এতে উঠতি বয়সের যুবকেরা বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। ইয়াবার বিরুদ্ধে জনমত গঠন কিংবা সচেতনতা সৃষ্টিতে তেমন কোনো কর্মসূচি না থাকলেও ইয়াবার ভয়াবহতা দেখে সীতাকুণ্ডের বিভিন্নস্থানে মাদক ও জঙ্গি বিরোধী সভা–সমাবেশ করছে পুলিশ। এছাড়া বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানও এলাকাকে মাদকমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল সীতাকুণ্ডে ইয়াবাসহ তিন ব্যবসায়ীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেন স্থানীয় পৌর যুবলীগ নেতা দাউট সম্রাট। সীতাকুণ্ড পৌর বাস স্ট্যান্ড থেকে স্থানীয়দের সহযোগিতায় মো. হোসেন (২৮), মো. হামিদ (৩০), জসীম উদ্দিন (৩২) নামের তিনজনকে ৬শ পিছ ইয়াবাসহ আটক করে। আটক তিনজনই কক্সবাজার সদরের খোয়ালিয়া এলাকার বাসিন্দা। গত ৬ এপ্রিল ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বড় দারোগারহাট এক্সেললোড কন্টোল স্টেশন এলাকা থেকে ৩০ লক্ষ টাকার ইয়াবাসহ দুই মাদক বিক্রেতা আটক করে র্যাব। আটককৃতরা হলেন, কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার মো. শরীফ (২০) ও খুলনা জেলার দৌলতপুর এলাকার শহিদুল ইসলাম প্রকাশ লাভলু (৪৫)।
গত ১ এপ্রিল ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বারআউলিয়া ফুলতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আলাউদ্দিন আল মামুন (৩৪) ও সুমন (২৬) নামে দুই যুবককে ৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়। গত ১১ এপ্রিল ভাটিয়ারী বাজারস্থ শ্যামলী বাস কাউন্টারে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্য অবস্থানরত যাত্রী আব্দুল খালেক (২৫) নামে এক ব্যক্তির ব্যাগ তল্লাশি চালিয়ে ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। গত ২০ এপ্রিল ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড় দারোগারহাট এলাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে ৪২ হাজার ইয়াবা সহ চালক সাইদুল শেখ (২৭) ও তার দুই সহযোগী টিটু শেখ (২২) এবং মো. জনি (২৩) নামে তিনজনকে আটক করে র্যাব। গত ৬ মে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঘোড়ামারা এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে ১ হাজার পিস ইয়াবা সহ হাবিবুর রহমান নামে ১ জনকে আটক করে পুলিশ। গত ৩ মে সীতাকুণ্ডের বার আউলিয়া এলাকায় কুমিল্লা গ্রামবাংলা পরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে ২ হাজার পিস ইয়াবা সহ শাহিদা আক্তার (২৩) নামের এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। সর্বশেষ হারমোনিয়ামে করে ইয়াবা পাচারকালে ভাটিয়ারী এলাকায় এক যুবকসহ ৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড পৌরসদরের আমিরাবাদ, গজারিয়া, ভুইয়া পাড়া, ওয়াপদা গেইট, চৌধুরী পাড়া এবং বড় দারোগাহাটে কলাবাড়িয়া, ছোট দারোগারহাট, বাড়বকুণ্ডের রেল স্টেশন, হাতিলোটা শান্তার দিঘির পাড়, মাহমুদাবাদ ব্রিজ এলাকা, ইয়াসীন নগর, অনন্তপুর, মান্দারী টোলা, নতুন পাড়া, সোনাইছড়ির ফুলতলা, জাফরাবাদ, দক্ষিণ ঘোরামারা, কুমিরা কোট পাড়া, সলিমপুর পাক্কা মছজিদ, জঙ্গল সলিমপুর, কালুর শাহ, ফকিরহাট এলাকায় ইয়াবা ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। উপজেলার প্রতিটি চায়ের দোকানে চলছে ইয়াবার বাণিজ্য। এতে উঠতি বয়সী যুবকেরা আসক্তি হয়ে পড়ছে। যার ফলে এলাকায় অপরাধ, চুরিসহ অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পুলিশ কোন অপরাধীকে আটক করলেই তার সাথে ইয়াবাও পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ আয়োজিত জঙ্গি, মাদক ও অপরাধ বিরোধী চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশাজীবীর সাথে মতবিনিময় ও সহযোগিতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মনির–উজ–জামানসহ চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিততে সভায় মাদক এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। সীতাকুণ্ড থানার উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্নস্থানে ওপেন হাউজ ডে করে ইয়াবাসহ মাদকের বিরুদ্ধে গণসচেতনা সৃষ্টি করছে।
গত মঙ্গলবার রাতে সীতাকুণ্ড পৌরসভার চৌধুরী পাড়া এলাকায় মাদকের ভয়াবহতা এবং ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ নিয়ে সভা হয়। এতে এলাকার সর্দার জয়নাল আবেদীন, আবুল হাসেম, মহিন উদ্দিন মহিন, শাওন চৌধুরী, আরিফ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন।
সভায় মাদক ব্যবসায়ী নাছিমা আক্তার, আফরোজাসহ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেন। এই ব্যবসা থেকে সরে না দাঁড়ালে ভবিষ্যতে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে বলে জানান।
বার আউলিয়া হাইওয়ে থানার (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ওসি ছালেহ আহম্মদ পাঠান জানান, টেকনাফ–কক্সবাজার থেকে বেশিরভাগ মাদক ব্যবসায়ী বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচার করছে।
গত দুই মাসে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কেই পরিবহনযোগে বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা পাচারকালে ব্যবসায়ীরা আটক হয়েছে।