ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কওমি মাদ্রসার ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকারের কোনো চুক্তি বা সমঝোতা হয়নি বলে জানিয়েছেন । তিনি বলেন, বাস্তবতা মেনে নিয়ে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। আর শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে হেরে গিয়ে বিএনপির মন খারাপ।
শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনায় ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের স্মরণে যুবলীগ এই আলোচনার আয়োজন করে। এ সময় ওবায়দুল কাদের নানা প্রসঙ্গের পাশাপাশি কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রসঙ্গেও কথা বলেন।
গত ১১ এপ্রিল গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন কওমি মাদ্রাসার ছয়টি শিক্ষাবোর্ডের শীর্ষ ব্যক্তিরা। এদের নেতৃত্ব দেয়া আহমেদ শাহ শফী শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারাসিল আরাবিয়ার পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামেরও প্রধান।
২০১৩ সালের ৫ মে ১৩ দফা দাবিতে হেফাজতের রাজধানী অবরোধ কর্মসূচিতে ব্যাপক হাঙ্গামা ঘটে। আর রাতে শাপলা চত্বর থেকে তাদের উচ্ছেদের পর হাজার হাজার কর্মীর মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয়। পরে অভিযানে কারও মৃত্যুর প্রমাণ দিতে না পারলেও ওই অভিযানের পর সরকারের সঙ্গে হেফাজতের শত্রুতা তৈরি হয়। আর ওই বছরেই পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা হেরে যান। এই পরাজয়ের পেছনেও শাপলা চত্বর অভিযানের সম্পর্ক রয়েছে বলেই ধারণা করা হয়ে থাকে।
তবে গত কয়েক বছরে হেফাজত নেতাদের সরকারবিরোধিতা অনেকটাই কমে এসেছে। আর কওমি মাদ্রাসা সদনের স্বীকৃতির পাশাপাশি হেফাজত নেতা শফির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ছবির পর সরকার এই সংগঠনের কাছে নতি স্বীকার করেছে কি না-সে নিয়ে কথা উঠে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হেফাজত কোন রাজনৈতিক দল নয়, তাদের সাথে কোন চুক্তি হয় নাই।’ তিনি বলেন, ‘ কওমি মাদ্রাসায় বিশাল একটি জনগোষ্ঠী রয়েছে এদেরকে অবহেলা করা যাবে না। বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কওমি মাদ্রাসায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার কোন অধিকার থাকবে না এটা কি করে হয়? এই জন্য শেখ হাসিনা কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছে।’
শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে বিএনপি হেরে গেছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের (বিএনপি) মন খারাপ হয়েছে, তারা আবার হেফাজতকে নিয়ে আরেকটি শাপলা চত্ত্বরের পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু তাদের সেই ইচ্ছায় গুড়েবালি হয়েছে।’
আওয়ামী লীগ আগামীকাল শনিবার থেকেই আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, এর অংশ হিসেবেই তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে।
‘আগামী নির্বাচনরে প্রস্তুতির জন্য সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন। এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির সর্বাত্মক অগ্রযাত্রা শুরু করবো আমরা’-বলেন কাদের।
বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে বিদেশিদের কাছে নালিশ না করার পরামর্শ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘বিদেশিরা কি ক্ষমতায় বসাবে? ক্ষমতার উৎস এদেশের জনগণ। নালিশ করতে হলে দেশের জনগণের কাছে করুন। বিদেশিদের কাছে নালিশ করে দেশের ১৬ কোটি মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করবেন না।’
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের সভাপতিত্বে এলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।