প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের কারও কারও কঠোর সমালোচনা করেছেন । তিনি বলেছেন, ‘ট্রাইব্যুনালের কিছু প্রসিকিউটর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে তারা মিসকন্ডাক্ট (অসদাচরণ) করেছেন।
সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের রিভিউ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন। আপিল বিভাগ এই রিভিউ আবেদনের পাশাপাশি সাঈদীর খালাস চেয়ে আসামির রিভিউ আবেদনও খারিজ করে দেয়। ফলে তাকে আমৃত্যু কারাগারেই থাকতে হবে।
২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। তবে আপিল বিভাগ এই সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়। আপিল শুনানিতে এই মামলায় ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের দুর্বলতা উঠে আসে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি জানান, প্রসিকিউশনের অদক্ষতার কারণেই সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝোলানো যায়নি।
আপিল বিভাগের রায়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনকে অকর্মন্য, অপদার্থ বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এই মন্তব্য এবং আদালতের পর্যবেক্ষণের পর তা বাতিলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছিল আপিল বিভাগে। এই আবেদনের ওপর বলতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি এসকিউশনের কড়া সমালোচনা করেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অনেকেরই আলাদা রাজনৈতিক পরিচয় আছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘কিছু নন-প্র্যাকটিসিং ল ইয়ার প্রসিকিউটর হয়েছেন। কিছু প্রসিকিউটর একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির মিটিংয়েও যান, যাদের (নির্মূল কমিটি) পলিটিক্যাল এজেন্ডা রয়েছে। তাঁরা (প্রসিকিউটর) কিন্তু মিসকন্ডাক্ট (অসদাচরণ) করছেন। এরা পাবলিক প্রসিকিউটরের পজিসন বোঝেন না।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি এটাকে (নির্মুল কমিটির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া) প্রফেশনাল মিসকন্ডাক্ট হিসেবে দেখছেন। কিন্তু আমাদের নিয়োগ বিধিতে এ রকম কোনোখানেই নেই যে, আমরা কোন সোশ্যাল অর্গানাইজেশনে যুক্ত হতে পারব না।’
তুরিন আফরোজ বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে এটা কেন করা যাবে না? যেখানে রাষ্ট্রপতি যাচ্ছেন নির্মূল কমিটির মঞ্চে, আইনমন্ত্রী যাচ্ছেন, গত সাত বছরে অ্যাটর্নি জেনারেল ছয় দিন নির্মূল কমিটির মঞ্চে বক্তব্য দিয়েছেন। এখন কথা হচ্ছে প্রফেশনাল মিসকন্ডাক্টে শুধু (ট্রাইব্যুনালের) প্রসিকিউটরা পড়বে কেন?’।
তুরিন আফরোজ বলেন, ‘প্রথমত কথা হলো এটাতে (নির্মুল কমিটির অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া) প্রফেশনাল মিসকন্ডাক্ট হয় কি না, হলে অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব নিজেও এই কাজের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন। এর ভেতরে কি অ্যাটর্নি জেনারেলরা পরেন না? আমাদের আইনটা তো একই।’