রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন । সাঈদীর ফাঁসি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের এবং খালাস চেয়ে আসামির রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরুর পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
রবিবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে এই রিভিউ শুনানি শুরু হয়।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর ফাঁসির আদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরে দেইল্যা রাজাকার হিসেবে পরিচিত সাঈদী মৃত্যুদণ্ড পান বিসাবালী ও ইব্রাহিম কুট্টি হত্যার দায়ে। এছাড়া ধর্ষণ, লুট, নির্যাতনসহ ছয়টি অভিযোগও প্রমাণ হয় তার বিরুদ্ধে। তবে এগুলো অভিযোগে সাজা দেয়নি ট্রাইব্যুনাল।
এই রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী উচ্চ আদালতে আপিল করলে ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়।
২০১৬ সালের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রিভিউ আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর পাঁচ দিন পর ১৭ জানুয়ারি রায় থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন সাঈদী।
আবেদন করার প্রায় দেড় বছর পর শুরুর হওয়া রিভিউ আবেদনের শুনানির প্রথম দিন আদালতে বক্তব্য দেন সাঈদীর আইনজীবী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার বক্তব্যের পর আদালত শুনানি মুলতবি করে সোমবার রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে বক্তব্য দেয়ার নির্দেশ দেয়।
আদালতের বাইরে নিজ কার্যালয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘সাঈদীর সাজার বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ একটি রিভিউ পিটিশন করেছে এই বলে যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী নাকি পিরোজপুরের পাড়েরহাটেই ছিল না। ওয়াজের জন্য ফ্যামিলি নিয়ে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে ছিল। কিন্তু তার এই বক্তব্য আদালত ভালোভাবে নেয় নাই।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘অন্য দুটি চার্জে যেখানে আমৃত্যু কারাবাসের আদেশ দিয়েছে, সেখানেও তার (সাঈদীর আইনজীবী) মতে নানা বিষয় বিবেচনা না করে সাঈদীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। আর রাষ্ট্রপক্ষ হিসেবে আমরা রিভিউ আবেদন করেছি যেহেতু আসামি দুটি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘ইব্রাহীম কুট্টি ও বিসাবালী হত্যায় সাঈদী সরাসরি জড়িত। কিন্তু আদালত অবজারভশন দিয়েছে, সাঈদী বিসাবালী হত্যায় সরাসরি জড়িত নয়, হুকুমদাতা। আমাদের কথা সে যদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকে, সেটা যেভাবেই হোক, প্ররোচনাকারীই হোক আর সরাসরি হোক সে অপরাধী। সুতরাং তাকে ফাঁসি দেওয়াটাই উচিত ছিল।’