বড় ধরনের সাইবার হামলা হয়েছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, স্পেন ও তাইওয়ানের মতো উন্নত প্রযুক্তির দেশসহ মোট ৭৪ বা ৯৯ টি দেশ এই হামলার শিকার। তথ্য প্রযুক্তি বিশারদরা বলছেন, বাংলাদেশেও এই হামলার ঝুঁকি থেকে বাইরে নয়। সতর্ক না হলে বা সচেতন না থাকলে প্রতিষ্ঠান আর ব্যক্তিগত কম্পিউটারও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এখন পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করেনি কেউ। ফলে তারা আসলে কী চায়, সেটাও জানা যায়নি। আর শনাক্ত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি কেউ। তবে এ বিষয়ে চেষ্টা চলছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে।
অ্যাভাস্টের ম্যালওয়্যার বিশেষজ্ঞ জ্যাকব ক্রুসটেক জানিয়েছে, তারা ৫৭ হাজার কম্পিউটার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। শুক্রবারে হ্যাকাররা ‘র্যানসমওয়্যার’ নামক ক্ষতিকর সফটওয়্যার ছড়িয়ে দেয় এবং এতেই অচল হয়ে পরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কম্পিউটার।হ্যাকাররা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির ওয়েবসাইট অচল করে দিয়ে বিনিময়ে ৩০০ ডলার দাবি করে।
বাংলাদেশও কি ঝুঁকির মধ্যে? এই ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেসের প্রেসিডেন্ট জনাব মুস্তফা জাব্বারের সাথে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, বাংলাদেশেও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কারণ হিসেবে বলেন ডিজিটাল সচেতনতার অভাব।
মোস্তফা জাব্বার বলেন, ক্ষতিকর সফটওয়্যারটি মেইলের মাধ্যমে বাক্তিগত কম্পিউটারকে আক্রান্ত করছে কিন্তু দেশের অধিকাংশ মানুষেরই কোন মেইল খোলা উচিত না এবং কোন লিঙ্কে প্রবেশ করা উচিত না। কিন্তু এ ব্যাপারে ন্যূনতম ধারণাও নেই অনেকের।
এই হাকিং কে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করে এই তথ্য প্রযুক্তিবিদ বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ডাটা জিম্মি রেখে মুক্তিপণ চাওয়া হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশে ডিজিটাল অপরাধসংক্রান্ত কোন আইন না থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রতিকারস্বরূপ নিজ দেশের আইটি এক্সপার্ট খুঁজে বের করার কথাও বলেন মোস্তফা জাব্বার। সেই সঙ্গে নিজ দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সচেতনতার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
যেভাবে হ্যাকিং হয়
হাকিং এর প্রক্রিয়াটা হল প্রথমে আপনার কাছে একটি মেইল আসবে। মেইলটিতে আপনাকে একটি জাভাস্ক্রিপ্ট ফাইল যার ফরম্যাট .JS এ ক্লিক করতে বলা হবে। ক্লিক করানোর জন্য অনেক আকর্ষণীয় প্রস্তাব দেয়া হবে। যেমন ফ্রি শপিং ভাইচার। ক্লিক করা মাত্র আপনার ফাইলগুলো এনক্রিপ্টেড হয়ে যাবে। এখনো পর্যন্ত ডিক্রিপশন করার কোন উপায় বের করা যায়নি।
তাহলে উপায়?
মোস্তফা জাব্বার বলেন, একমাত্র উপায় হলো, এসব মেইলে ক্লিক না করা। কেবল এই মেইলটা নয়, অপরিচিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির মেইলে ঢুকার আগে নিশ্চিত হতে হবে সেটা কোনো ধরনের ঝুঁকির কারণ হতে পারে কি না। এই সচেতনতা ও সাবধানতাই বাঁচিয়ে দিতে পারে বহু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাইট বা কম্পিউটার হ্যাক হওয়া থেকে।
তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক ওয়েবসাইট এনগ্যাজেটস বলছে, যেহেতু উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এ আক্রমণ ঘটেছে, তাই মাইক্রোসফট এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। মাইক্রোসফট বলেছে, Ransom: Win 32. WannaCrypt নামের ম্যালওয়্যারটি শনাক্ত করা এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন মাইক্রোসফটের প্রকৌশলীরা। তাই কোনো করপোরেট নেটওয়ার্ক আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকলে তাতে লগইন করার আগে হালনাগাদ অ্যান্টিভাইরাস বা উইন্ডোজ ডিফেন্ডার চালু করে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে তারা।