জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয়জনে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে । নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মীও রয়েছেন। তার নাম আব্দুল মতিন।

পুলিশ জানান, জঙ্গি আস্তানার খবর পেয়ে ভোরে উপজেলার মাটিকাটা ইউনিয়নের হাবাসপুর মাঠের ভেতরের ওই বাড়িটির আশপাশে অবস্থায় নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপর বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে ভেতরে জঙ্গি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয় পুলিশ। পরে হ্যান্ডমাইকে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বারবার বলা হলেও জঙ্গিরা সাড়া দেয়নি।

সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হঠাৎ বাড়ি থেকে বের হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি ছোঁড়ে জঙ্গিরা। এ সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়েকজন জঙ্গি আত্মহুতি দেয়। জঙ্গিদের ছোড়া বোমায় দুই পুলিশ সদস্য ও ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মী আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ফায়ার কর্মী মতিনকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশের এএসআই উৎপল কুমার ও কনস্টেবল তাইজুল ইসলামকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

বিস্ফোরণের পর মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা জঙ্গিদের লাশ

বিস্ফোরণের পর মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা জঙ্গিদের লাশ

নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গিরা হলেন- বাড়ির মালিক সাজ্জাদ হোসেন (৫০), তার স্ত্রী বেলী বেগম (৪৫), তাদের ছেলে সোয়াইদ (২৫), আল-আমিন (২০) ও মেয়ে কারিমা খাতুন (১৭)।

বিস্ফোরণের পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জঙ্গি আস্তানা থেকে বেরিয়ে সাজ্জাদ হোসেনের বড় মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (২৭) আত্মসমর্পণ করেছেন। এর আগে বাড়ি থেকে সুমাইয়ার ৮ বছর বয়সের ছেলে জুবায়ের হোসেন ও তিন মাসের মেয়ে আফিয়া খাতুনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। সকাল ১১টার পর সুমাইয়া ও তার সন্তানদের গাড়িতে করে নিয়ে যায় পুলিশ। ওই গাড়িতে প্রায় ২৫ বছরের এক যুবককেও দেখা গেছে। তিনি সুমাইয়ার দেবর মিনারুল ইসলাম বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মিনারুল স্থানীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম।

সুমাইয়ার শ্বশুর বাড়ি পদ্মার চরাঞ্চলে বলে জানা গেছে। জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে কয়েকমাস আগে তার স্বামী জহুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। জহুরুল এখন গাজিপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দী।

জঙ্গি আস্তানা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান

জঙ্গি আস্তানা ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিপজুর আলম মুন্সি সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে সুমাইয়ার তিন মাসের মেয়েকে কোলে নিয়ে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে তার আট বছর বয়সী ছেলে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে নেয়।

এলাকাবাসী জানান, বাড়িটিতে সাজ্জাদ হোসেন স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। এলাকাবাসীর সঙ্গে তাদের খুব একটা মেলামেশা ছিল না।

সাজ্জাদ গ্রামে গ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করতেন। আর তার দুই ছেলে আলামিন ও শোয়েব করতেন কৃষিকাজ। ধানক্ষেতের মধ্যে বিচ্ছিন্ন ওই বাড়ি স্থানীয়দের কাছে ‘আলামিনের বাড়ি’ হিসেবেই পরিচিত বলে জানান ওসি হিফজুল আলম মুন্সি।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031