রাজধানী দিল্লীর তপ্ত গরমে বিবিসি’র সংবাদদাতা গিয়েছিলেন একটি মন্দিরে।ভারতে অনেক হিন্দুর কাছে মঙ্গলবার দিনটি বেশ পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।
সে মন্দিরের নিচে একটি ঘর আছে যেখানে গরু রাখা হয়। প্রায় ২৫টির মতো গরু আছে সেখানে।
প্রতি মঙ্গলবার দিদার হোসেন বেগ এখানে আসেন গরুগুলো দেখতে। সেখানে গিয়ে কিছু সময় তিনি গরুর যত্ন নেন। মি: বিগ কাছের একটি মসজিদে নামাজ পড়ে তারপর গরু দেখেতে মন্দিরে যান।
“আমি এখানে গরুগুলো দেখতে গত ১০ বছর যাবত আসা-যাওয়া করছি। এ গরুগুলো আমার পরিবারের মতো। আমি অন্য আরো কয়েকটি জায়গায় গরুর আশ্রয়কেন্দ্র দেখতে যাই,” বলছিলেন মি: বেগ।
তিনি যে শুধু গরু দেখতে আসেন তা নয়। তিনি গরু রক্ষার কাজ করেন। তার কয়েকজন প্রতিবেশীকে নিয়ে মি: বেগ এটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন যার নাম ‘মুসলিম গরু রক্ষা দল’।
এর মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যাতে তারা গরুর মাংস না খায়।
ভারতে গত কয়েক বছরে গরু রক্ষার নামে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠেছে। এসব সংগঠনের বেশিরভাগ নেতৃত্ব দিচ্ছে হিন্দুরা।
গরু রক্ষার নামে তাদের নানা কর্মকাণ্ড বিভিন্ন সময় সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। গরু পরিবহনের দায়ে মুসলমানদের হত্যা এবং হামলার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।
মুসলমানদের মধ্যে অল্প কিছু ব্যক্তি, যারা গরু রক্ষার কাজ করছেন,দিদার হোসেন বেগ তাদের মধ্যে অন্যতম। মি: বেগ বলেন,” গরু জবাই করার জন্য আমার সম্প্রদায়ের মানুষদের ক্রমাগত অভিযুক্ত করা হচ্ছে। মুসলমানরা যদি গরু জবাই বন্ধে এগিয়ে না আসে তাহলে কে আসবে?”
গরুর আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে যত্ন করা ছাড়াও মি: বেগ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যাতে মুসলমানরা গরু জবাই না করে এবং গরুর মাংস না খায়।
এজন্য তিনি ভারতের মধ্য প্রদেশে বেশ কয়েকটি প্রচারণা ক্যাম্প বসিয়েছিলেন।
তিনি দাবী করেন, হিন্দুদের নেতৃত্বে যে ‘গো রক্ষা’ কমিটি হয়েছে তাদের মতো তিনি নিজেও অবৈধভাবে গরু পরিবহনের খবর পুলিশের কাছে পৌঁছে দেন।
মি: বেগ দাবী করেন তিনি কোন প্রচারণার জন্য এ ধরনের কাজ করছেন না।
আমি কোন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে বিশ্বাস করি না । সর্বশেষ নির্বাচনে আমি একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলাম। আমি যখন প্রথম গরু রক্ষার জন্য কাজ শুরু করি তখন আমার সম্প্রদায়ের লোকজন বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে তামাশা করতো,” বলছিলেন মি: বেগ।
তার পরিবারও একাজে তাহকে সহায়তা করছে। মি: বেগের স্ত্রী শাহিন বেগম জানালেন তিনি নিজেও গরুর মাংস পছন্দ করেননা । তার খাবারের তালিকায় মাছ ও মুরগী থাকে।
মি: বেগ এখন মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে খাদ্যে পুষ্টির জন্য মহিষ এবং ভেড়ার মাংস খাওয়া যেতে পারে। ভারতে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে গরু জবাই এবং গরুর মাংস খাওয়ার বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু হয়।
গরু জবাই বন্ধ করতে বিভিন্ন জায়গায় মূলত উগ্রপন্থী হিন্দুদের নেতৃত্বে ‘গো রক্ষা’ দল গঠন করা হয়।
গরুর মাংস খাওয়া এবং গরু পাচারের অভিযোগ এনে কিছু মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ভারতে এ পরিস্থিতি নিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
এমন অবস্থায় দিদার হোসেন বেগ মনে করেন, পরিস্থিতি যাতে আরো অবনতির দিকে না যায় সেজন্য মুসলমানরাও ভূমিকা রাখতে পারে।
“মুসলমানদের মহিষের মাংস খাওয়ায় উদ্বুদ্ধ করতে আমি কোন সমস্যা দেখি না। আমি সংখ্যালঘু। সেজন্য সংখ্যাগুরু হিন্দুদের বিষয়টি আমাদের বিবেচনা করতে হবে,” বলছিলেন মি: বেগ।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, হিন্দুরা যেহেতু গরুকে পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করে সেজন্য কেন গরু জবাই করতে হবে? যেখানে মহিষের মাংস সহজে পাওয়া যাচ্ছে সেখানে কেন গরুর মাংস খেতে হবে?
সুত্রঃ বিবিসি বাংলা