শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তিন কারণে এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে বলে জানিয়েছেন । বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পরীক্ষার ফল নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জনান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ছোটখাটো অনেক কারণ আছে পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের পেছনে। তবে পরীক্ষার ফল বিপর্যয়ের মূল কারণ নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন। তিনটি কারণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, এবার নতুন পদ্ধতিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন, প্রশ্নফাঁস রোধ করা এবং পরীক্ষাকেন্দ্রে কড়াকড়ির কারণে আগের বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে।
তবে মন্ত্রী এবারের ফলাফলকে ‘আসলে বিপর্যয়’ নয় দাবি করে বলেন, এ বছর উত্তরপত্রের সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে।’
উত্তরপত্র মূল্যায়ন সঠিক হওয়ার কারণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বোর্ডগুলো বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধান পরীক্ষকদের উত্তরমালা প্রণয়নের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য একটি প্রশ্নমালা সব প্রধান পরীক্ষককে সরবরাহ করা হয়েছে। এ কারণে এবার সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আসার আগে এসএসসি ও এইচএসসিতে কোনো শৃঙ্খলা ছিল না। ফল কবে প্রকাশ হবে সেটারও কোনো সময়সীমা ছিল না। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর আমরা এসব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা নিয়ে এসেছি।’
আগে উত্তরপত্র মূল্যায়ন ছিল ত্রুটিপূর্ণ
খাতা মূল্যায়ন নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পরীক্ষা মূল্যায়নে কোনো পদ্ধতি ছিল না। শত শত বছর এভাবেই চলে এসেছে। কিন্তু আমরা এখন একটা মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছি। এবার আমাদের ফল দেখে মনে হবে অনেক বেশি ফেল করেছে। মনে হতে পারে, আমাদের ছেলেমেয়েরা খারাপ হয়ে গেছে বা সব শেষ হয়ে গেছে। এটাকে কিন্তু এভাবে দেখলে হবে না। এমন ফলাফলের জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আমরা জানতাম এবার যেভাবে আমরা পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছি, তার কারণে এমনটা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খাতা দেখার পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কিন্তু আমরা চিন্তা করলাম এটাকে একটি পদ্ধতির মধ্যে আনা দরকার। শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও অনেক তারতম্য হচ্ছে। দেখা গেছে, একই খাতা একজন দেখে এক রকম নম্বর দিচ্ছেন। আবার আরেকজন শিক্ষক সেটা দেখে আরেক রকম নম্বর দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা গত তিন বছর এটা নিয়ে গবেষণা করেছি। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছি। এবার আমরা চালু করেছি প্রধান পরীক্ষককে ১২ শতাংশ খাতা দেখতে হবে। আগে তারা খাতা না দেখেই মতামত দিতেন। কিন্তু এখন আর সে সুযোগ নেই।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘এবার আমরা শিক্ষকদের খাতা দেখার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কীভাবে খাতা দেখবে। নম্বর দেয়ার ক্ষেত্রে একটি স্ট্যান্ডার্ড নিয়ম ফলো করার বিষয়ে অনুসরণ করা হয়েছে। এসব কারণে এবার খাতা দেখার ক্ষেত্রে সঠিক মূল্যায়ন হয়েছে। এক-দুই নম্বরের পার্থক্য থাকতে পারে। কিন্তু সেই রকম কোনো পার্থক্য এবার হয়নি।’
বিজ্ঞান শাখায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি উত্তীর্ণের সংখ্যাও বেড়েছে। ছাত্রীসংখ্যা বেড়েছে। পুরো শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এ তথ্যগুলো খুবই ইতিবাচক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা পদক্ষেপ, শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের চেষ্টায় ভালো ফল হয়েছে।
মানবিক ও ব্যবসায় খারাপ ফলে পাসের হার কম
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ফল বিপর্যয়ের বিষয়ে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. অলিউর রহমান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ মানার চেষ্টা করেছি। উত্তরপত্র মূল্যায়ন যথাযথভাবে করেছি। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৪ শতাংশ, কেন এবার ৫৯ শতাংশ হলো তার একটি অবজাবেশন নিয়েছি। বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইংরেজিতে ফেল করেছে ২৫ হাজার ৬০৬ জন। গণিতে ৩৪ হাজার ৯৮৯ জন। এই দুটো বিষয়ে কোনো কোনো বিদ্যালয়ে এমনটি হয়েছে তা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মানবিকে, ব্যবসায় শিক্ষায় সামান্য বিপর্যয় হয়েছে।
পাসের হার কমানোর বিষয় খতিয়ে দেখবে মাউশি
এবার পাসের হার কম কেন সেটি বিশেষভাবে খতিয়ে দেখবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। সংস্থাটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এবার পাসের হার কমেছে। প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মনে হয়েছে নতুন পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়নের কারণে হয়েছে। কিন্তু এরপরও আমরা বিষয়টি নিয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ করব। দেখব কেন এমনটি হয়েছে। সেভাবে আগামীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।