সিটিং সার্ভিস এর নামে ঢাকায় কোন প্রক্রিয়ায় বাস চলবে-সেই সিদ্ধান্ত জানানোর ঘোষণা দিয়ে সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ আর বাস মালিক সমিতি এখন পর্যন্ত কোনো নড়াচড়াই করেনি। আর এই সিটিং নামে চলা অবৈধ সার্ভিসের মাধ্যমে যাত্রীদের পকেট কাটা চলছেই। সব মিলিয়ে এই হলো রাজধানীর গণপরিবহনের এক চিত্র।

যাত্রীদের পকেট কাটার সিটিং সার্ভিস দিয়ে দুই সপ্তাহ আগে বেশ তোলপাড় হয়েছে রাজধানীতে। পরিবহন মালিকরা ঘোষণা দিয়ে সিটিং বন্ধের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নিজেরাই পিছিয়েছেন। যাত্রীদের পক্ষ থেকে দাবি না উঠলেও তারাই আবার যাত্রী স্বার্থের অযুহাত তুলে বিআরটিএর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ১৯ এপ্রিলের সেই বৈঠকে ১৫ দিনের জন্য সিটিংবিরোধী বিআরটিএর অভিযান স্থগিত করার ঘোষণা আসে। এমনও বলা হয়, এই কয়দিন গাড়ি সিটিং এ চলবে, তবে ভাড়া নিতে হবে বিআরটিএর নির্ধারিত হারে।

কিন্তু বিআরটিএর অভিযান চলার সময়ই যেখানে নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করা যায়, সেখানে অভিযান স্থগিতের ফল কী হয় সেটা সহজেই অনুমেয়। আর বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে ফায়দা নেই-সেটা বুঝে নিয়ে যাত্রীরাও মুখ বুঁজে সয়ে যাচ্ছে এই অনাচার। যার যত খুশি, সেভাবেই আদায় হচ্ছে ভাড়া।

১৯ এপ্রিলের ওই বৈঠকে কথা হয়েছিল, সিটিং সার্ভিস অবৈধ হলেও যেহেতু এই ধরনের সার্ভিস চালু হয়েছে, তাই একে আইনের আওতায় এনে কীভাবে চালানো যায়, সে বিষয়ে ঘোষণা আসবে ১৫ দিনের মধ্যে। এই হিসাবে আগামী ৪ মে শেষ হচ্ছে এই সময়সীমা।

সেদিন কি কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসবে? এই খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেল, ওই বৈঠকের পর না বিআরটিএ, না বাস মালিক সমিতি-কেউই সিটিং সার্ভিস বিষয়ে কোনো বৈঠকেই বসেনি। এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে কমিটি গঠনের ঘোষণা এসেছিল, সেই কমিটিও গঠন হয়নি।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘বিআরটিএর চেয়ারম্যান আমাদের নিয়ে একটি কমিটি করার কথা ছিল, কিন্তু এখনও কমিটি করে নাই।’

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মো. মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ‘সিটিং সার্ভিসের বিষয়টি নিয়ে কথা বলার এখনও সময় আসে নাই। ৪ মের আগে আমাদের কোন মন্তব্য নেই এই বিষয়ে।’

ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত যখন বাস্তবায়ন হবেই না, তাহলে এই বৈঠক কেন-জানতে চাইলে এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘সিটিং সার্ভিসের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোয় জনদুর্ভোগ বেড়ে গিয়েছিল। জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করেই অভিযান স্থগিত করা হয়েছে।’

সিটিংবিরোধী অভিযান শুরুর পর উধাও হয়ে যাওয়া বাসগুলো ফিরে এসেছে নগরে, দেখা যাচ্ছে স্বাভাবিক যানজট। একই সঙ্গে ফিরে এসেছে যাত্রী ঠকানো। আর এই সিটিং নিষিদ্ধকাণ্ডে লোকাল বাসের ভাড়া বৃদ্ধির মত তুঘলকি কাণ্ডও দেখা যাচ্ছে।

পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েতউল্লাহ তার পুরনো সুরেই বলেছেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘রাজধানীতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি বিআরটিএ দেখছে। বিআরটিএ এ বিষয়ে অভিযান চালালে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। এখনও আমাদের সঙ্গে এই বিষয়ে কোন মিটিং হয় নাই।’

অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর কর্মকর্তা মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, আমাদের নিয়মিত মোবাইল কোর্টে চলছে, সেখানে অতিরিক্ত ভাড়ার আদায়কারীদের মামলা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যাত্রী সাধারনের কাছে কোন সহযোগিতা পাই না। যাত্রীদের মোবাইল কোর্টে এসে অভিযোগ করা উচিত, তাতে আমাদের কাজও অনেকটা সহজ হয়। কিন্তু যাত্রীরা কেউ কিছু বলে না। ‘সিটিং সার্ভিস নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। বিআরটিএ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, তারা ঠিকভাবে কাজ করলে যাত্রী সাধারনের ভোগান্তি অনেকটা লাঘব হতো। কিন্তু বিআরটিএ লোক দেখানোর জন্য কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে, তাতে কোন কাজ হচ্ছে না।’

রাজধানীতে পথে ঘাটে যাত্রী লাঞ্ছিত হয়, অনেকেই জানে না অভিযোগ কোথায় দিতে হবে। আবার বিআরটিএ কে অভিযোগ করলেও অনেক সময় কাজ হয় না। এ জন্য জনগণ অভিযোগ করে না। বিআরটিএ প্রতিটি গাড়িতে একটি করে ফোন নম্বর দিয়ে দিলে বিষয়টি সহজ হতো এবং অনেক যাত্রীই অভিযোগ করতো।’

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031