আন্দোলন করার দরকার নেই শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে পোশাক শিল্প শ্রমিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির জন্য জানিয়েছেন তিনি। তার ওপর ভরসা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমার রাজনীতি আপনাদের জন্যই। বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের জন্য।’
মহান মে দিবসে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে, এই অবস্থায় বেতন ভাতা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করতে হবে না।
শ্রমিকদের স্বার্থের কথা বলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতিবাচক তৎপরতার বিষয়েও শ্রমিকদেরকে সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, শ্রমিক নেতা নামধারী কিছু ব্যক্তি যে আসলে কী করতে চায় সেটাই তিনি বুঝতে পারেন না।
শ্রমিকদের কল্যাণে সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্তত এটুকু বলতে পারি যে, আমার রাজনীতি এদেশে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে। জনগণের উন্নয়নের জন্যই এখানে আমাদের থেকে কারও দরদ বেশি হতে পারে, এটা আমি বিশ্বাস করি না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের শ্রমিক ভাই-বোনেরা এইটুকু বিশ্বাস রাখবেন, আপনারা শ্রম দেন, আপনারা দেশের উন্নয়নের অংশীদার, এই দেশের অর্থনীতির যতটা উন্নতি হবে, বেতন ভাতার জন্য আন্দোলন করা লাগবে না। আপনাদের উপযুক্ত মজুরি যেন পান, সে জন্য ব্যবস্থা করবো এবং আমরা করে যাচ্ছি।’
২০১৩ সালে পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম বেতন কাঠামো নির্ধারণের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন গার্মেন্টসের ন্যূনতম বেতন বাড়ালাম, কমিটি করা হয়েছিল। কমিটি যেটাতে রাজি হয়েছিল,আমি রাজি হই নাই। আমি আমার মত করে গার্মেন্টস মালিকদেরকে বাধ্য করেছিলাম ৫৩০০ টাকা দিতে। তখন তো বার্গেনিং এজেন্ট আমি হয়েছিলাম, এটা হচ্ছে বাস্তবতা।’
‘তারা কি ভাড়া খাটেন?’
কারও নাম উল্লেখ না করে কিছু শ্রমিক নেতার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি দেখি, কিছু শ্রমিক নেতা জুটে যান, তারা যে কোথাকার শ্রমিক তা জানি না, কিন্তু তারা নেতা সাজেন। একটা শ্রেণি আছে, যাদের কাজই হচ্ছে দেশে খবর নাই, বিদেশে ম্যাসেজ পাঠাতে থাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তাদের লাভটা কি? তারা কি ভাড়া খাটেন? কোনো বিদেশি এজেন্টদের ভাড়া খেটে এটা করেন কি না সেটাই আমার সন্দেহ। নইলে দেশে কোনো ঘটনা ঘটলো, দেশে বসে সমাধান না করে মুরব্বি খুঁজতে যাবেন পরদেশে?’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা এসে কী করবে? খবরদারি করবে? আর এই খবরদারির ফলে যদি ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে যারা কাজ করে খান ইন্ডাস্ট্রিতে, তাদের ভাগ্যে কী জুটবে? এদের উস্কানিতে কেউ যদি কোনো কিছু করে, তাহলে তারা নিজেরাও চাকরি হারালে তারা কি খাবার দিতে আসে? বিপদে পড়লে সাহায্য দেয়? আহত হলে চিকিৎসার সুযোগ দেয়? সাহায্য করে? করে না। তাহলে তাদের স্বার্থটা কোথায়, আমি এটা খুঁজে পাই না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা কথায় কথায় বিদেশিদের কাছে নালিশ করতে যান, তারা যে নিজের দেশের ক্ষতি করে, শ্রমিক, মালিক, কল-কারখানার ক্ষতি করে। এ বিষয়টা যে কেন তারা উপলব্ধি করতে পারে না।’
মালিক-শ্রমিকদের পারস্পরিক বোঝাপড়ার তাগিদ
শিল্পের স্বার্থেই মালিক ও শ্রমিকদের সহযোগিতা জরুরি বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। শিল্পের মালিকদেরকে তিনি বলেন, ‘যারা শ্রম দেয়, তাদের ভাল মন্দটা আপনারা দেখবেন।’ শ্রমিকদেরকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে শিল্পটা থেকে জীবন, জীবিকা নির্বাহ হয়, আপনি দুবেলা খেতে পারেন, আপনার সংসার চালাতে পারেন, সেটাও যাতে ভালভাবে চলে, সেটা যেন টিকে থাকে, সেটার দায়িত্বও কিন্তু আপনাদের।’ তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, মালিক শ্রমিক, উভয়ের দায়িত্ব রয়ে গেছে। শিল্প যদি না থাকে, তাহলে আপনি কী দিয়ে খাবেন? কী দিয়ে চলবেন?’।
অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের দেখবে সরকার
আমাদের অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক রয়েছে জানিয়ে তাদের কল্যাণে সরকার চিন্তা করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘তাদের সুনির্দিষ্ট চাকরি নাই, যে যেখানে পারে, কাজ করে খায়। তাদের বিষয়েও আমাদের চিন্তা করতে হবে। তাদের বিষয়টাও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে চিন্তা করতে হবে। তাদের জন্য কল্যাণমুখী কর্মক্ষেত্রের পদক্ষেপ আমরা নেব।’
বিদেশে যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকদেরকে অনলাইনে নিবন্ধনের পাশাপাশি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন নিবন্ধন ছাড়া বিদেশে না যাওয়ার চেষ্টা না করেন। জমি জমা বিক্রি না করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, কেউ যেন দালালের খপ্পরে না পড়েন।
পৃথিবীর কোন দেশে কোন শ্রমিক দরকার সেই খবর নিয়ে সরকার শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।