ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ভল্টার সানচেস বাংলাদেশে তৈরি কাপড়ে শ্রমিকদের ঘামের সঙ্গে রক্ত মেশাতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেন, ‘আমরা দ্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই, যে সব কাপড় বাংলাদেশ থেকে তৈরি হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, সেই কাপড়ে শ্রমিকদের ঘামের সাথে রক্ত মিশানো হবে রানা প্লাজার মতো, সেটা কখনো হতে দেয়া হবে না।’
মহান মে দিবস উপলক্ষে সোমবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিল এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি আমিরুল হক আমুর সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, রায় রমেশ চন্দ্র, ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্লোবাল ইউনিয়নের সহকারী জেনিন, এশিয়া দেশগুলোর সভাপতি অপূর্ব।
ভল্টার সানচেস বলেন, ‘বিভিন্ন ব্র্যান্ড, বায়ার্স এবং মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এখান থেকে কাপড় কিনে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে। সীমিত কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কাছে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে। তারা বাংলাদেশ থেকে কাপড় কিনে সস্তায় শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। আমরা করপোরেট ক্যাপিটালদের এই অমানবিকতা বন্ধ করতে পারি যদি ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তুলতে পারি। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি।’
শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল গড়ে তোলার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্ভয়ে-নিশ্চিন্তে তারা যাতে সংগঠিত হতে পারে সেই অধিকার নিশ্চিত করা। প্রথম প্রয়োজন নিরাপদ কর্মস্থল তৈরি করা।’
গত ডিসেম্বরে আশুলিয়ায় শ্রমিক আন্দোলনের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর মাসে আশুলিয়ায় যে আন্দোলন হয়েছিল আমরা সেই কথা ভুলে যেতে পারি না। কারণ শ্রমিকরা তাদের বাঁচার মতো মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছিল মাত্র। আপনারা জানেন, আমিও জানি এই আন্দোলনকে কিভাবে দমন করা হয়েছিল। শ্রমিক নেতাদের জেলে দেয়া হয়েছিল। ইউনিয়ন অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। শত শত শ্রমিকদের ছাঁটাই করা হয়েছিল। এটা বাংলাদেশের কর্মস্থলের নিরাপদ মানদণ্ড হতে পারে না।’
বাংলাদেশে এসে তার মুগ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের দেশে এসে আনন্দিত। আমি আপনাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ। এই সভায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি গর্বিত। আপনারা যে শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষে আছেন সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।’
ভল্টার সানচেস বলেন, ‘ভাই ও বোনেরা, আপনারা জানেন আমি ব্রাজিলের অধিবাসী এবং শ্রমিক নেতা। ব্রাজিলে আজ আট কোটি শ্রমিক তাদের দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করছে। আমাকে আজ সেখানেই থাকার কথা ছিল। তারপরও আমি আপনাদের মাঝে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আপনরা জানেন মে দিবস আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস। মে দিবসে আপনাদের মাঝে এসে সংহতি প্রকাশ করতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত এবং আনন্দিত।’
মে দিবসের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৩১ বছর আগে আমেরিকার শিকাগো শহরে অতিরিক্ত শ্রম সময় কমিয়ে আট ঘণ্টা করার দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিল।’
বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে সকালে আমি পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিস (বিলটস) এর এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গড়ে সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা কাজ করে শ্রমিকরা, যা অত্যন্ত বেশি।’ আমি তোমাদের এই নিশ্চয়তা দিতে পারি, তোমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলতে পার তোমাদের আন্দোলনের সাথে ইন্ডাস্ট্রি অল গ্লোবাল ইউনিয়ন সংহতি প্রকাশ করবে। এক সাথে লড়াই করবে।’
রানা প্লাজার পরে আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে আন্দোলন লড়াই করে ব্রান্ডগুলোকে বাধ্য করেছিলাম অ্যাকর্ড গঠন করার জন্য, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।’