পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ব্যবস্থা না নেয়ায় মেয়েকে নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন হযরত আলী মেয়েকে এলাকার এক যুবকের ধর্ষণচেষ্টা ও বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টার ঘটনায় । এমনই অভিযোগ করছেন তার স্ত্রী ও এলাকাবাসী।

শনিবার সকালে শ্রীপুর রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা সিটপাড়া এলাকার হযরত আলী ও তার স্কুলপড়ুয়া মেয়ে আয়েশা। মেয়েটি স্থানীয় পটকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিটপাড়া গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী খাসজমিতে ছোট টিনের ঘরে পালক মেয়ে আয়েশা ও স্ত্রী হালিমাকে নিয়ে বাস করতেন। বাবা-মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনায় এখন ওই বাড়িতে শোকের ছায়া।

হযরত আলীর পাগলপ্রায় স্ত্রী হালিমা খাতুন স্বামীর লাশ দাফনের জন্য ছুটছেন কখনো থানায়, কখনো ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে। নিস্তব্ধ বাড়িতে কয়েকটি ছাগল ও গরু বাঁধা।

হালিমা খাতুনের অভিযোগ, তার সাত বছরের শিশুসন্তানকে বেশ কয়েক মাস আগে ধর্ষণের চেষ্টা করে এলাকার ফারুক নামের এক যুবক। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ দেন তিনি। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল হোসেন জানান, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হবে। কিন্তু সুষ্ঠু সুরাহা করতে ব্যর্থ হয়ে আপোষ-মীমাংসার জন্য চাপ দেন আবুল হোসেন।

পুলিশও পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। হালিমা খাতুন অভিযোগ করেন, এ ছাড়া অভিযুক্ত ফারুক, খালেকসহ বেশ কয়েকজন যুবক তাদের বসতবাড়ি ও জমি দখলের চেষ্টা করে এবং নানা হুমকি-ধমকি দেয়। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেন হালিমা খাতুন। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় অপরাধীরা আরো বেপরোয়া হয়ে পড়ে।

জমিজমা নিয়ে ফারুক, খালেকসহ বেশ কয়েকজন প্রতিবেশী বিভিন্ন সময় তার স্বামীকে মারধর করে বলে অভিযোগ করেন হালিমা। তিনি বলেন, ‘তাদের অত্যাচার থেকে রক্ষার জন্য তিনি বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ করেন। এরপর তার নাবালক মেয়েকে অভিযুক্ত ফারুক সাইকেলে উঠিয়ে জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসব অনাচার সহ্য করতে না পেরে তিনি (হযরত আলী) কয়েকবার  আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।’

হালিমার ভাষ্য, শনিবার মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন হযরত আলী। পরে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান তারা।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধর্ষণের চেষ্টা ও জমিজমা নিয়ে বিরোধের অভিযোগ তারা শুনেছেন। কিন্তু এসব ঘটনায় পুলিশ কিংবা স্থানীয়ভাবে কোনো বিচার পায়নি পরিবারটি।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা শ্রীপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক বাবুল হোসেন জানান, হালিমা খাতুনের অভিযোগটি স্থানীয়ভাবে মীমংসার আশ্বাস দিয়েছিলেন ইউপি সদস্য আবুল হোসেন। এরপর তিনি বিষয়টি সম্পর্কে আর কিছু জানাননি।

বিচার-সালিশে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার অভিযোগে ইতোমধ্যে গোসিঙ্গা ইউপি সদস্য আবুল হোসেনকে আটক করা হয়েছে। তবে তিনি নির্দোষ দাবি করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান মো. শাজাহান সরকার জানান, তার কাছে কোনো বিচার চাইতে যাননি হালিমা।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031