১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। ওই দিন প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষ নিহত হন। সর্বস্ব হারায় এক কোটি মানুষ। এদের বেশির ভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও দ্বীপসমূহে। সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতীয়া দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। এর মধ্যে শুধু সন্দ্বীপে মারা যায় প্রায় ২৩ হাজার লোক। নিহতের সংখ্যা বিচারে স্মরণকালের ভয়াভহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে ৯১-এর এই ঘূর্ণিঝড় একটি।
ভয়াল ২৯ এপ্রিলের ২৬তম বছর আজ। কিন্তু এখনো অনেক স্থানে অরক্ষিত রয়ে গেছে উপকূল। বেড়িবাঁধগুলোর অবস্থা করুণ। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নেই। যেগুলো আছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোর অবস্থাও করুণ। ভয়াল ২৯ এপ্রিল দুঃস্বপ্নের মতো এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। ঘটনার ২৫ বছর পরও স্মৃতি থেকে মুছে ফেলতে পারছেন না দুঃসহ সেই সময়গুলো। জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায়। নিহতদের লাশ, স্বজন হারাদের আর্তচিৎকার আর বিলাপ বার বার ফিরে আসে তাদের জীবনে।
জানা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানির পর আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অর্থায়নে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। সীতাকুণ্ডের পৌর এলাকাসহ ৯টি ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ৫৬টি।
প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল আসার আগে-পরে আকাশে মেঘ দেখলে শিউরে উঠেন উপকূলীয় এলাকার মানুষ। ওই দিন দুই উপজেলায় বিভিন্ন সংগঠন স্মরণসভাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের পর দুই উপজেলায় দেশি-বিদেশি অর্থায়নে শতাধিক সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ১৯৯১ সালের পরে নতুন করে আর কোনো আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়নি। ফলে চকরিয়া-পেকুয়ার ৫ লাখ মানুষ এখনো ঝুঁকিতে বসবাস করছে। এছাড়া দুই উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় এখনো পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়নি। যেগুলো আছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওগুলোর অবস্থাও করুণ। টেকসই বেড়িবাঁধও নির্মিত হয়নি। এতে করে বেশিরভাগ উপকূলীয় ইউনিয়ন এখনো অরক্ষিত রয়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য দুই উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (প্যারাবন) সৃষ্টি করা হলেও তা উজাড় করে দুবৃর্ত্তরা চিংড়ি চাষ করছে। অভিজ্ঞমহলের অভিমত, এখানে ১৯৯১ সালের মতো দুর্যোগ হলে প্রাণহানি আগের চেয়েও ভয়াবহ হবে।
জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় ১ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়। কর্ণফুলী নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০ টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্থানচ্যুত হয় এবং আঘাতের কারণে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও ছিল। এছাড়া প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সন্দ্বীপে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। তবে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে সন্দ্বীপের মানুষকে বাঁচানোর জন্য আরো আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজন।