প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব তুলে ধরে শতাব্দীর প্রাচীন এই বন্দরের সুনাম বৃদ্ধিতে সকলকে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ একটি দেশ। এই সমৃদ্ধির পথে বন্দরের ভূমিকা সবচাইতে বেশি। সেভাবেই বিষয়টি মাথায় রেখে আন্তরিকতার সঙ্গে সবাই কাজ করবেন। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পোর্ট এক্সপো বাংলাদেশ ২০১৭’র উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পোর্ট এক্সপো- ২০১৭ উদ্বোধন করা হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল বন্দরের বিভিন্ন দিক এবং পোর্ট এক্সপো-২০১৭ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগের জন্য কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে টানেল হচ্ছে, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ করে দিয়ে বন্দর যেন আরো উন্নত হয সে ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। আমরা চাই বন্দরটা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার কল্যাণের জন্য কাজ করবেন, সেটাই আমি চাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্য মুক্ত হিসেবে গড়ে তুলবো, যে স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি । তিনি বলেন, আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ। এই সমৃদ্ধির পথে বন্দরের ভূমিকা সবচাইতে বেশি। সেভাবেই বিষয়টি মাথায় রেখে আন্তরিকতার সঙ্গে সবাই কাজ করবেন।
অনুষ্ঠানে গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ চট্টগ্রাম বন্দর এবং গণভবনে সংসদ সদস্যবৃন্দ, উর্ধ্বতন সামরিক ও বেমাসরিক কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে দেশের ৯২ শতাংশ পণ্য পরিবাহিত হয় এবং বন্দরটি দেশের ৯৮ শতাংশ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে থাকে। বন্দর কতৃর্পক্ষের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বন্দর ’লয়েড লিস্ট’ জরিপে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ১০০ কন্টেইনার বন্দরের মধ্যে বর্তমানে ৭৬তম অবস্থানে এসেছে। ২০১৬ সালেই এই অবস্থান ছিল ৮৬তম । কার্গো হ্যান্ডলিংয়েও এই বন্দরের প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ। এ বছর চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দু’দিনব্যাপী পোর্ট এক্সপো-২০১৭’র আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থান থেকে এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যেটি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতুবন্দ হিসেবে কাজ করতে পারে। এই মেলবন্ধন সুৃষ্টিতে সরকার গঠনের পর থেকেই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। যে কারণে সরকার গঠনের পর থেকেই এই মেলবন্ধন সৃষ্টিতেই তাঁর সরকার নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে দেশের অন্যতম সম্পদ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আমাদের সৌভাগ্য যে, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। যার বিশাল সমুদ্রও রয়েছে। এই সমুদ্র সম্পদ যথাযথ ব্যবহারের মধ্যেই আমাদের বিশাল এ জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়ন নিহিত আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরের ঐতিহাসিক ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানী জাহাজ সোয়াত হতে অস্ত্র খালাসে বাধা দেয়ায় ২৩ জন ডক শ্রমিকের শহীদ হওয়া এবং নৌ কমান্ডোদের অপারেশন জ্যাকপট ছিল সাহসী এবং বীরত্বপূর্ণ ঘটনা। সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানও পাকিস্তানের ওই সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাশ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাধার সম্মুখীন হন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম বন্দরের যে সকল বীর কর্মকর্তা ও কর্মচারি এবং শ্রমিক ভাইয়েরা শহীদ হয়েছেন তাদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন, বিশেষত অর্থনীতির চাকা সচল করতে চট্টগ্রাম বন্দরকে কার্যক্ষম করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বন্দর থেকে তৎকালিন সৌভিয়েত রাশিয়ার সহযোগিতায় পাকিস্তানী বাহিনীর মাইন অপসারণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের এই দিনে আমি আশা করি- দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বন্দরের দক্ষতা ও সেবার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বন্দর কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের নিরলস প্রচেষ্টা এবং সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আপনারা আন্তরিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে চট্টগ্রাম বন্দর আরও এগিয়ে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031