-
চট্টগ্রামের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছিল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাম্প্রতিক বাক্যুদ্ধ গত কিছু দিন ধরে । নানা বিষয়ে ভিন্নমত এবং কথার লড়াইয়ে ‘বিরোধ’ যখন চরমে, কর্মীরা বিব্রত, তখনই দুই নেতা এক মঞ্চে উঠে হাতে হাত রেখে ‘ঐক্যে’র ঘোষণা দেন। গত সোমবার ঐক্যের মঞ্চে দুজনের হাতে হাত আর মুখে ‘জয় বাংলা’ োগান স্বস্তি দিয়েছিল নগরবাসীকে। ঠিক একদিন পরে প্রায় একই সময়ে ‘জয় বাংলা’ োগান উভয় নেতার কর্মীরা ব্যবহার করল পরস্পরকে ঘায়েল করার কাজে। গতকাল আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে ছাত্রলীগের ভাঙচুরের পর পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে ওই সংগঠনের কর্মীরা।
একদিন আগে কেনই বা হাতে হাত রাখা, আর পরদিন কেনই বা এই সংঘাত, তা নিয়ে সকলের মুখে প্রশ্ন : কি দেখার কথা, কি দেখছি। হাত ধরে কী লাভ হলো? তবে কি হাত মিলানোটা রাজনৈতিক কোনো কৌশল ছিল?
দুই নেতার এই বিরোধ সংঘাতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কায় চট্টগ্রামের ৮জন বিশিষ্ট নাগরিক এক যুক্ত বিবৃতি দিয়েছিলেন গত ১৫ এপ্রিল। ১৬ এপ্রিল দুজনের ‘ঐক্যে’ তাঁরাও স্বস্তি পেয়েছিলেন। গতকালের এ সংঘাতময় পরিস্থিতি দেখে তাদেরই একজন অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম বলতে বাধ্য হলেন, আগের দিনেরটা ছিল লোক দেখানো ঐক্যের ভড়ং।
চট্টগ্রাম মহানগরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনবারের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরের বিবাদের ইতিহাস এক দশকের পুরনো। মহিউদ্দিন যখন মেয়র ছিলেন, তখনও ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিয়ে নাছিরের সঙ্গে তার দূরত্বের খবর পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে মহিউদ্দিনের বদলে মনোনয়ন দেয়া হয় নাছিরকে। কেন্দ্রের নির্দেশে মহিউদ্দিন সেই সময় নাছিরের পক্ষে প্রচারেও নামেন। নির্বাচনের আগে হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর বিরোধিতা করা নাছির গত বছর নগরজুড়ে জমি ও স্থাপনার হোল্ডিং ট্যাক্স পুনঃনির্ধারণের ঘোষণা দিলে প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা শুরু করেন মহিউদ্দিন। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে মেয়র নাছির নগরীর পাথরঘাটা থেকে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রাজাখালিতে সরিয়ে নিলে মার্চে তা আগের স্থানে ফিরিয়ে আনেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন। তখন থেকেই দুই নেতার বিবাদ প্রকাশ্যে চরম আকার ধারণ করে। লালদীঘি মাঠে এক সমাবেশ থেকে মহিউদ্দিন তার সাধারণ সম্পাদক নাছিরকে ‘খুনি’ আখ্যায়িত করেন। তার অভিযোগ, নাছিরের তত্ত্বাবধানে ১২টি খুন হয়েছে। নাছিরকে ‘অথর্ব’ আখ্যায়িত করে তাকে মেয়র পদ থেকে অপসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠানোর কথাও বলেন মহিউদ্দিন। পাল্টা জবাবে মেয়র নাছির খুনের প্রমাণ দেয়ার আহ্বান জানান। মহিউদ্দিনের বক্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলে উড়িয়ে দেন তিনি। এরপর মঙ্গলবার দুপুরে মহিউদ্দিন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, নাছিরের হাত দিয়ে মানুষ খুন হওয়ার প্রমাণ তার কাছে আছে। তিনি নাছিরের সিটি কর্পোরেশনকে ‘পাগলের আড্ডাখানা’ বলায় কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা বৃহস্পতিবার মহিউদ্দিনের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং সাবেক মেয়রের সময়ে ‘নালা–নর্দমা দখল করে গড়ে তোলা স্থাপনা’ অপসারণের সিদ্ধান্ত জানান।
গত সোমবার মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে নিজেদের বিরোধের জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের দায়ী করে মহিউদ্দিন বলেন, সাংবাদিক ভাইয়েরা, আবেদন করব আপনাদের লেখনিতে একটা জাতির ঐক্য যেটা হচ্ছে তাতে যেন ফাটল না হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেছেন, সুইমিং পুল নির্মাণের বিষয়ে আমার বক্তব্য হবে জেলা ক্রীড়া সংস্থার জায়গা থেকে। কারণ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার পরিকল্পনায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এটি নির্মাণ করছে। ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় এ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। পরবর্তীতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ করে এবং পিডিও (প্রকল্প পরিচালক) নিয়োগ করে।
তিনি বলেন, এখন যারা সুইমিং পুল নির্মাণের বিরোধিতা করছেন এবং বক্তব্য দিচ্ছেন, তারা তো ক্রীড়া সংগঠক নন। তাদের কাছে এ বিষয়ে ধারণা থাকারও কথা না। তাছাড়া এটি সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। এটার বিরোধিতা কেন? হয়ত ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে এমনটি করছে।
তিনি প্রশ্ন করেন, গাড়ি কেন ভাঙচুর করল? গাড়ির অপরাধ কি? সুইমিং পুলকে তো ক্রীড়া থেকে আলাদা করার সুযোগও নেই। স্পোর্টসে অনেকগুলো ডিসিপিন আছে। সুইমিংও একটি। যেকোনো ডিসিপিনে সুইমিং অপরিহার্য। ক্রিকেট, ফুটবল, হকিসহ অন্যান্য ক্রীড়ায় ফিটনেস বৃদ্ধির জন্য সুইমিং অপরিহার্য।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আ জ ম নাছির বলেন, ৭টি বিভাগীয় শহরের ২১টি জেলায় সুইমিং কমপ্লেক্স আছে। চট্টগ্রামে এতদিন হয়নি। এখানে সুইমিং পুল হচ্ছে, সেটা চট্টগ্রামের জন্য বড় অর্জন এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম শহরে সুইমিং পুলের যথেষ্ট অভাব আছে। সাঁতার জানা না থাকায় প্রতি বছর অনেকেই ডুবে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন। এ সুইমিং পুল হলে চট্টগ্রামবাসী সাঁতার শেখার সুযোগ পাবেন। নতুন প্রজন্ম সাঁতার শিখতে পারবে। ওই জায়গা থেকে অবশ্যই সুইমিং পুল হওয়া উচিত। নির্মাণাধীন সুইমিং পুলের কাজ শেষ করার জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে নগরবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
সংঘর্ষের ব্যাপারে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গতকাল আজাদীকে বলেন, মারামারি হবে বলে আমি কালকে (সোমবার) ডেকে ঠাণ্ডা করে দিয়েছি। আমি বাঁচিয়ে দিয়েছি। ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি করলে আমি কী করব?
তিনি বলেন, এখন পোয়াঅলে পোয়াঅলে মারামারি গরের, আঁই কিইরগুম। ইয়িন ইতারার–ইতারার ব্যাপার। লালখান বাজারের ঘটনার ব্যাপারে মহিউদ্দিন বলেন, এগুলো লালখান বাজারের নিজস্ব ঘটনা।
মাত্র একদিনের মধ্যেই ঐক্যে ফাটল ধরা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, এ ধরনের কাদা ছোঁড়াছুড়ির কারণে সাধারণ জনগণ রাজনীতিবিদদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়বেন। আরেকটি ওয়ান ইলেভেন ঠেকাতে হলে রাজনীতিবিদদের নিজেদের শোধরাতে হবে।
গত রাতে আজাদীর কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মূল ভূমিকাটা পালন করেছিলেন এ দেশের রাজনীতিবিদরাই। সেই রাজনীতিবিদদের ওপর এক এগারোতে মইনুদ্দিন–ফখরুদ্দিন সরকার কালিমা লেপন করেছিল। এ কালিমা থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারছি না। আর এ ধরনের আচরণের কারণে কালিমা মোচনের সুযোগটাও হারাতে বসেছি।
তিনি বলেন, আমাদের ওপর জনগণের যে আশা–আকাঙক্ষা, তা পারস্পরিক কাদা ছোঁড়াছুড়ি, শিষ্টাচার বহির্ভূত কথাবার্তা, মারামারি, সংঘর্ষ, হত্যার রাজনীতির কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে রাজনীতিবিদদের থেকে। এটা শুধু আওয়ামী লীগেই হচ্ছে, তা বলছি না, নিজেদের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে রাজনীতিবিদদের শোধরাতে হবে। আগের কালচার ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের থেকেই তো ভদ্রতা, নম্রতা, শিষ্টাচার এসব জুনিয়ররা শিখবে। সারা দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষ বিব্রত হয়, বীতশ্রদ্ধ হয় এমন কোনো কিছুই করা ঠিক নয়। তা যদি না করতে পারি, তা হবে আরেকটা এক এগারোর অশনি সংকেত।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন মনে করেন, শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে ঐক্য ঠিকই আছে। মূল ঝামেলা সিজেকেএসের সাথে ছাত্রদের। আজাদীকে তিনি বলেন, ঐক্য ঠিকই আছে। সিজেকেএসের প্রেসিডেন্ট ডিসি সাহেব। হ্যাঁ, সেক্রেটারিসহ আরো কয়েকটি পদে আমাদের লোক আছে। পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধী চক্রও আছে। আউটার স্টেডিয়ামেই সুইমিং পুল হতে হবে কেন? লালদিঘির মাঠ ছাড়া নগরীতে এমনিতেই কোনো মাঠ নেই। এই মাঠে অনেকে প্র্যাকটিস করে। আমাদের বিজয় মেলা হয়ে আসছে। বিএনপি সরকার এই বিজয় মেলা বন্ধ করতে শিশু পার্ক করেছে। এখন সুইমিং পুল করার সিদ্ধান্তটাও ওই একই কারণে। শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া চট্টগ্রাম এলে জনসভা করতে হয় লালদিঘির মাঠে, পলোগ্রাউন্ড মাঠে কিংবা আউটার স্টেডিয়ামে। পলোগ্রাউন্ড মাঠে মেলা চলে বছরের অধিকাংশ সময়। এখানেও যদি সুইমিং পুল হয়, তবে আর জায়গা কোথায়?
তিনি বলেন, সুইমিং পুল হওয়ার আর কোনো জায়গা কি নেই? মহিউদ্দিন চৌধুরী লালদিঘিটাকে সুইমিং পুল করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। স্টেডিয়ামের পাশেই হতে হবে এমন তো কথা নেই। আর স্টেডিয়াম তো আর স্টেডিয়াম নেই, দোকানপাড়া হয়ে গেছে। সুইমিং পুল হওয়ার পর বলবে, সুইমিং করে উঠে ড্রিংকস লাগবে, বসাও ড্রিংকসের দোকান, বসাও আরো কিছু দোকান, উদ্দেশ্যটা তো ওটাই। প্রত্যেক অ্যাকশনের অপজিট রিঅ্যাকশন তো থাকবে। ডিসি সাহেবকে বুঝতে হবে, মানুষের রক্তের ওপর সুইমিং পুল তিনি বানাতে পারেন না। তাছাড়া সিজেকেএসের পারফরমেন্স খেলাধুলার দিক থেকে অত্যন্ত খারাপ। ন্যাশনাল অলিম্পিকে সবচেয়ে খারাপ রেজাল্ট করেছে এবার সিজেকেএস। চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় টিমে সম্প্রতি কেউ যেতে পারছে না। সংঘর্ষের ব্যাপারে সুজন বলেন, এটা ঠিক, ছাত্রদের আরেকটু সংযত হওয়া উচিত ছিল।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাম্প্রতিক বাকবিতণ্ডায় উদ্বেগ প্রকাশ করে চট্টগ্রামের ৮জন বিশিষ্ট নাগরিক যুক্ত বিবৃতি দিয়েছিলেন ১৫ এপ্রিল। বিবৃতিতে তারা বলেন, পত্রপত্রিকায় গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশিত বর্তমান ও সাবেক মেয়রের মতবিরোধ চট্টগ্রামের সচেতন মানুষকে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন করেছে। মেয়র শহরের নির্বাচিত প্রথম নাগরিক। তার দায়িত্ব অনেক, তার কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশাও অনেক। সাবেক এবং বর্তমান উভয় মেয়রেরই এ বিষয়টি বোঝা উচিত এবং অবিলম্বে তাদের ব্যক্তিগত কাদা ছোঁড়াছুড়ি বন্ধ করা প্রয়োজন।
বিবৃতিদানকারীদের অন্যতম অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, দুজনের বিরোধ এতটা প্রকাশ্য রূপ ধারণ করেছিল যে, আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম। কারণ দুজনের পক্ষেই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একটা বড় অংশ আছে। শহীদ মিনারে দুজনের সহাবস্থান এবং ঐক্যের আহ্বান দেখে স্বস্তি পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম সমাধানটা হয়েই গেল। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) যে ইস্যুতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হলো, তাতে স্পষ্ট হলো যে, আগের দিনেরটা ছিল লোক দেখানো ঐক্যের ভড়ং। তাদের মনের ঐক্য হয়নি। আউটার স্টেডিয়ামে সুইমিং পুল হবে কি হবে না, তা নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষে আমরা খুব হতাশ। পরিকল্পিত উন্নয়নের ব্যাপার হলে তো এটা হওয়ার কথা ছিল না। দুজনের জেদাজেদির ফসল এই সংঘর্ষ। কিছুই বলার নেই আমাদের। আমরা ঐক্যের চেষ্টা করেছিলাম, হয়নি। কী আর করা যাবে?
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |