এই গরমে বাসের মধ্যে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকা ভীষণ কষ্টকর। ‘রীতিমত যুদ্ধ করে বাসে ওঠেছি, কিন্তু বসার সিট নেই। তাছাড়া ঘামের অসহ্য গন্ধে পুরো বাসের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে পড়েছে। বাসের কয়েকটা গ্লাস ভাঙা থাকার কারণে বাইরে থেকে ধূলাবালি গাড়ির ভেতরে ঢুকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অনেক দিন ধরে এসব সমস্যা থাকলেও এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নেই কোনো মাথাব্যথা।’
অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩৭ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। আর বাকি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য নেই পর্যাপ্ত বাস। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
তাছাড়া বাসগুলোতে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় শিক্ষার্থীদের প্রায় সময় দাঁড়িয়ে যাতায়াত করতে হয়। এটা নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আঁখি গ্লোরি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রতিদিন ক্লাস শেষে আমাদের হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠতে হয়। বাসে বসার জন্য পর্যাপ্ত সিট না থাকায় প্রায়ই দাঁড়িয়ে যাতায়াত করি। সারাদিন ক্লাস করার পর বাসের মধ্যে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে অসহ্য লাগে।’ তাছাড়াও পুরোনো বাসগুলোতে ফ্যান না থাকায় গরমের দিনে অনেক কষ্টে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় বলেও জানান তিনি।
আঁখি বলেন, ‘মিরপুর রোডে যাতায়াতকারীর সংখ্যা বেশি। কিন্তু সেই অনুসারে পর্যাপ্ত বাস নেই। যার ফলে শিক্ষার্থীদের গন্তব্য পৌঁছাতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।’
ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বাসে ওঠার পর খালি সিট থাকলেও আমরা বসতে পারি না। কারণ যারা আগে বাসে উঠে তারা বাসের সিটের মধ্যে আইডি কার্ড বা কখনো ব্যাগ রেখে তাদের বন্ধুদের জন্য সিট দখল করে রাখছে। যেখানে অন্য কারো বসার সুযোগ নেই। যার ফলে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
আবদুল্লাহ জানান, অনেক সময় বাস ড্রাইভাররা বাস চলার প্রচলিত নিয়ম ভঙ্গ করে, ভুল দিকে বাস চালান। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বিভাগের সহকারী ম্যানেজার মো. আতাউর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাদের এই খাতে বাজেটের পরিমাণ পর্যাপ্ত না থাকায় এসব সমস্যা হচ্ছে। প্রতিবছর আমাদের বাজেটে ঘাটতি থাকে। তারপরও আমরা চেষ্টা করি শিক্ষার্থীরা যাতে ভালোভাবে যাতায়াত করতে পারেন।’
এই কর্মকর্তা জানান, এখন আগের চেয়ে যাতায়াত ব্যবস্থার অনেক উন্নত হয়েছে। আগের তুলনায় বাসের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তবে তা শিক্ষার্থীর সংখ্যার তুলনায় কম বলে স্বীকার করেন তিনি।
আতাউর রহমান বলেন, ‘ঢাবির বাসগুলোতে বহিরাগতের সমস্যা তেমন নেই, তারপরও সিট সংকটের কারণ হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি।’ শিক্ষার্থীদের এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পরিকল্পনা ইতোমধ্যে গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের প্রধান সহকারী শফিকুর রহমান মোল্লার দেয়া তথ্যমতে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরিবহন খাতে বাজেট ১৪ কোটি ১২ লাখ ২৬ হাজার। যার মধ্যে বিআরটিসি বাসের ভাড়া বাবদ ব্যয় হবে প্রায় আট কোটি টাকা।
শফিকুর রহমানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ঢাবির নিজস্ব বাস আছে ১৬টি। যার মধ্যে একটি সাময়িকভাবে অচল। তিনি জানান, রাজধানীর আরও ১৯টি রোডে বিআরটিসির বাস (ভাড়ায়) শিক্ষার্থীদের বহন করে থাকে। যার মধ্যে পাঁচটি রোডে একতলা বাস আর বাকি ১৪টি রোডে দ্বিতল বাস চলাচল করে। এসব রোডে প্রায় ৩৫টি বিআরটিসির বাস চলাচল করে।
শফিকুর রহমান জানান, তাছাড়াও ঢাবির নিজস্ব ছয়টি মিনিবাসের মধ্যে যথাক্রমে সুফিয়া কামাল, কুয়েত মৈত্রী, ফজিলাতুন্নেসা ছাত্রী হলের যাতায়াতের জন্য তিনটি ব্যবহৃত হয়। একটি মিনিবাস ব্যবহৃত হয় আই.বি.এ. শিক্ষার্থীদের জন্য। আর বাকি দুটি শিক্ষকদের পরিবহন করে থাকে।
এই কর্মকর্তা জানান, আরও প্রায় ১৩টি মাইক্রোবাস শিক্ষকদের আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। যার মধ্যে তিনটি ঢাবির নিজস্ব আর বাকি ১০টি ভাড়ায় চালিত।
পরিবহন অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি একতলা বাসে আসন সংখ্যা ৫২টি। দ্বিতল বাসে আসন সংখ্যা ৮০টি, মিনিবাসগুলোতে ৪০টি আর মাইক্রোবাসে ১৪টি। সবমিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা চার হাজার ৭০টি। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর তুলনায় অপ্রতুল।কারণ প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার শিক্ষার্থী রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। শিক্ষার্থীর তুলনায় আসন সংখ্যা মাত্র ৩০ শতাংশ। তাছাড়াও নানা রকম সমস্যার কারণে পুরনো বাসগুলোতে যাতায়াত প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তারপরও অন্য কোনো উপায় না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা হুড়োহুড়ি করে বাসে উঠেন, গাদাগাদি করে বাসে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছান।