বাস মালিকদের সরকার যখন বাসভাড়া নির্ধারণ করে তখন প্রতিটি বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন করার একটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয় । প্রথম প্রথম এই শর্ত মানা হলেও কদিন বাদে সেটি উধাও হয়ে যায়। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআরটিসির বাসগুলোতেও নেই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থার (বিআরটিএ) নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা।
রবিবার রাজধানীর গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কমপক্ষে ১০টি বিআরটিসি বাসে খোঁজ নিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
অথচ বিআরটিএ থেকে বলা হয়েছে, সরকারি বা বেসরকারি সব বাসেই ভাড়ার তালিকা ঝুলিয়ে রাখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
রবিবার সকাল নয়টার দিকে বাসাবো বিশ্বরোড থেকে ঢাকা মেট্রো ব ১১-১২৭৫ নম্বরের একটি লাল রঙের বিআরটিসির দোতলা বাস ‘গুলিস্তান গুলিস্তান’ হাঁক পেড়ে যাত্রী তুলছিল। এই প্রতিনিধি বাসে উঠে কোথাও ভাড়ার তালিকা দেখতে পাননি।
ভাড়ার তালিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে ওই বাসের কন্ডাক্টরের সপাট উত্তর- ‘কোনো তালিকা নেই। আর তালিকা দিয়ে কী প্রয়োজন। আমরা তো অতিরিক্ত ভাড়া নেই না।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাসাবো থেকে গুলিস্তান ভাড়া ১০ টাকা। সবাই নিচ্ছে, তাহলে আমাদের বেলায় তালিকা খুঁজছেন কেন!’
একই চিত্র পাওয়া যায় রাজধানীর গুলিস্তান মোড়ে। সকাল ১০টার দিকে বিআরটিসির ঢাকা মেট্রো ব ১১-৬০৮৭, মতিঝিল টু ইপিজেড রুটে চলাচলকারী দোতলা বাস, মতিঝিল থেকে গাজীপুর রুটের ঢাকা মেট্রো ব ১১-৬২৩৩, ঢাকা মেট্রো ব ১১-৬০৭৪, ঢাকা মেট্রো ব ১১-৫৭২২, ঢাকা মেট্রো ব ১১-৫৭১৯, ঢাকা মেট্রো ব ১১-৬২৩৮, ঢাকা মেট্রো ব ১১-১২৭৬, ঢাকা মেট্রো ব ১১-৬২৫৯ নম্বর লাল রঙের দোতলা বিআরটিসির বাসের ভেতরে ঘুরে কোথাও ভাড়ার তালিকা মেলেনি।
ভাড়ার তালিকার বিষয়ে এসব বাসের চালক ও হেলপারদের একই উত্তর, এটা সরকারি বাস। তারা চুক্তিতে চালান। কোনো রকম অতিরিক্ত ভাড়া নেন না তারা।’ তাদের ভাষ্যমতে, মতিঝিল থেকে টঙ্গী ৩৫ টাকা, আর গাজীপুরের ভাড়া ৫০ টাকা।
এ সময় তাদের কারো কারো হাতে টিকিটের বান্ডিলও দেখা গেছে। তবে অনেক যাত্রীই অভিযোগ করেন, এগুলো লোক দেখানো। তাদের কেউই ভাড়ার নিয়ে টিকিট দেয় না।
রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরসহ বিভিন্ন রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল করে। এর মধ্যে কয়েকটি রুটের জন্য মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকায় বিআরটিসি বাসের কাউন্টার রয়েছে। বিআরটিসির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসগুলোর জন্য রয়েছে কাউন্টার। যাত্রীরা ওসব কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে চলাচল করেন।
কাউন্টার সার্ভিসে ভাড়া নির্ধারিত, সেখানে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু তাদের কাউন্টারে বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা নেই। যেখানে তালিকা আছে, সেগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি। আর লোকাল বাসগুলোতে বিভিন্ন সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।
২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর সর্বশেষ গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি করে সরকার। তখন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিআরটিসিকে রুটভিত্তিক ভাড়ার নতুন তালিকা প্রস্তুত করতে নির্দেশ দেন। তখন বলা হয়েছিল নতুন ভাড়ার তালিকা বাসে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বাসে চলাচলকারী যাত্রীদের অনেকেই জানে না সরকারের এই নির্দেশের কথা। আবার দেখা গেছে অনেক যাত্রী কোনো রকম আপত্তি ছাড়াই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যান।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সচিব মো. শওকত আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, সরকারি নির্দেশ মোতাবেক রাস্তায় চলাচলকারী প্রতিটি বাসকেই ভাড়ার তালিকা ভেতরে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। যদি কেউ এই নির্দেশ অমান্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিআরটিসির বাসগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাড়ার তালিকা রাখে না জানালে এই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি হোক কিংবা বেসরকারি, সবার ক্ষেত্রে এই আইন প্রযোজ্য।
যাদের কাছে ভাড়ার তালিকা নেই তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাড়ার তালিকা নেই এমন যানবাহনের ক্ষেত্রে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।