চট্টগ্রামে ৬০ গুণ বেশি মার্কারি (পারদ) পাওয়া গেছে সাগর ও মিঠা পানির মাছে সহনীয় মাত্রার। তিন বছর আগে এই মাত্রা ছিল ৫৫ শতাংশ। মার্কারির এই ভয়াবহ মাত্রা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকির সৃষ্টি করছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এনভায়রনমেন্ট এন্ড স্যোসাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) পরিচালিত সমীক্ষা রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টটি ইতোমধ্যে মৎস্য অধিদপ্তরসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশের পাশাপাশি মার্কারির মাত্রা কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণের উপরও গুরুত্বারোপ করেন বিশিষ্টজনেরা। একই সাথে মার্কারির মাত্রা কমানোর পদক্ষেপ নেয়ারও সুপারিশ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, দেশে ব্যাপক হারে ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্যের যথেচ্ছ ব্যবহার পারদের ভয়াবহ বিস্তারের জন্য দায়ী বলে সা¤প্রতিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে মাছের শরীরে পারদের মাত্রা বৃদ্ধির ব্যাপারটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেও উল্লেখ করা হয়।

বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য এবং কারখানায় প্রস্তুতকৃত মাছের খাবার থেকে জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত মারাতœক মার্কারি ছড়িয়ে পড়ছে। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের অন্যতম উপকরণ মার্কারির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ভবিষ্যত প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের নদী, সাগর, খাল বিল এবং মিঠা পানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উপর একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছে। যাতে মার্কারির মাত্রা পাওয়া গেছে ৬০ পিপিএম।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্যের জন্য সহনীয় মার্কারির মাত্রা হচ্ছে ১ পিপিএম। তিন বছর আগে পরিচালিত অপর এক সমীক্ষায় মাছে মার্কারির উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল ৫৫ পিপিএম। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে মার্কারির মাত্রা ৫ পিপিএম বেড়ে ৬০ পিপিএম-এ গিয়ে ঠেকার বিষয়টিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মার্কারি বা পারদ একটি প্রাকৃতিক উপাদান। পারদ কখনো ধ্বংস হয় না। ব্যবহার পরিবর্তন হলেও পারদ প্রকৃতিতে থেকে যায়। বিশ্বে প্রতিবছর ২০ হাজার টনের মতো পারদ ব্যবহৃত হয়। এর প্রায় ৭০ শতাংশই মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়ে প্রকৃতিতে ফিরে আসে।

এছাড়া কয়লা পোড়ানোর মাধ্যমে বা বন্ধ ঘরে কয়লা পুড়িয়ে যে ধোঁয়া তৈরি হয় তাতে প্রকৃতিতে পারদ ছড়ায়। যথাযথভাবে ইলেক্ট্রনিক্স বর্জ্য নিষ্কাশন না করা না হলে পারদের বিস্তার ঘটে। বিভিন্ন কারখানার উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পারদের ব্যবহার হয় এবং তা প্রকৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে। থার্মোমিটারসহ বিভিন্ন মেডিকেল ইকুইপমেন্টে বিপুল পরিমাণ পারদ থাকে। যা নানা প্রক্রিয়ায় প্রকৃতিতে আসে। মাছের খাদ্যে পারদ ব্যবহৃত হয়। আর সেই মাছ খাদ্য খেয়ে পারদ ছড়ায়। সাগর এবং নদীর বড় শিকারি মাছেও বিপুল পরিমাণ পারদ থাকে।

চট্টগ্রামের সাগর এবং নদীর মাছের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পে চাষাবাদ করা মাছে পারদের উপস্থিতি অনেক বেশী। পুকুর এবং দীঘির বড়, ছোট এবং মাঝারি তিন ধরনের মাছেই পারদের উপস্থিতি আশংকাজনক বলেও সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। পুকুর ও দিঘীর মাছে পারদের এই উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকি বলেও রিপোর্টে মন্তব্য করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে যে, দেশের লাখ লাখ মানুষ মাছের ওপর নির্ভরশীল। প্রতিদিনই মানুষ কোন না কোনো ভাবে মাছ খায়। আর এতে করে নিজের অজান্তে পারদ ঢুকে যাচ্ছে মানুষের শরীরে।

মৎস্য কার্যালয়ের পরিসংখ্যান সহকারী পরিতোষ দাশ জানান, চট্টগ্রামে মিঠা পানির ৪৮ হাজার ১৭৫ টন মাছ উৎপাদন হয়। একই সাথে চট্টগ্রামের নদী ও সাগর হতে পাওয়া মাছের পরিমাণ ৮০ হাজার ২২৭ টন। এই মাছ চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে দেশের নানা স্থানে এবং বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।

চট্টগ্রাম স্ট্যারল্যাব ক্লিনিকের চিকিৎসক ড. সেলিম সরওয়ার বলেন, পারদ একটি মারাতœক রকমের প্রাকৃতিক উপাদান। জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পারদের ফলে স্কিন ক্যান্সার, কিডনি অকেজো হওয়া, লিভারের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, গর্ভবতী মায়েদের বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দেয়া, দৃষ্টি, শ্রবণ ও স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়ার ঘটনা ঘটে। তিনি বিষয়টি নিয়ে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031