প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইন, শাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে দ্বন্দ্ব কাম্য নয় জানিয়ে বলেছেন, সব বিভাগ সবাইকে সম্মান করা উচিত। তিনি বলেন, সবারই কিছু কিছু ক্ষমতা আছে। কে কাকে মানবে এ নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে তা দেশের জন্য ভাল হবে না।
শনিবার রাজধানীর কাকরাইলের বিচারপতিদের আবাসিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না এ রকম ধরনের কোনো কথা উঠলো, যে আমাদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব বা কিছু আছে। এ রকম কথা উঠলে জাতির জন্য তা ভালো হবে না। জনগণের জন্য ভাল না বা বিচার বিভাগের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তেমনি নির্বাহী বিভাগ অথবা আইন বিভাগ নিয়েও জনগণ ভুল ধারণা নিয়ে যাবে। যে কোনো বিষয় হলে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা করা উচিত।’
একই আয়োজনে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা অভিযোগ করেন, বিচারবিভাগকে না জানিয়ে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো আইন হুট করে পাস করা হয় না। অনেক ধাপ পেরিয়েই পাস হয়। সেই আইনকে চট করে নাকচ করে দেয়া অন্যায়।
কিছুদিন আগে সরকার বিচারবিভাগ সংক্রান্ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেয়ার আগে বিচার বিভাগের অভিভাবক হিসেবে প্রধান বিচারপতিকে কোনো ইস্যুই অবহিত করা হয়নি। সম্পূর্ণ ভুল তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে সরকারপ্রধানের কাছে সত্য গোপন করে সিদ্ধান্তগুলো হাসিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ রকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করা হলে ভুল বোঝাবুঝি হতো না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি মহল সবসময় সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছে। এ রকম ভুল বোঝাবুঝির কারণে দেশের সাধারণ জনগণের কাছে ভুল বার্তা চলে যায়।’
পরে প্রধানমন্ত্রী বলেনম ‘একটা রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ থাকে, আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ। এই তিনটি অঙ্গের মধ্যে সমঝোতা থাকা এবং একে অপরের সম্পূরক হিসেবে কাজ করবে। একে অপরকে অতিক্রম করে না, ক্ষমতার শক্তি দেখিয়ে না… ক্ষমতা কারও কিন্তু কম নয়। এখন কে কাকে সম্মান করবে, কে কাকে করবে না, কে কার সিদ্ধান্ত নাকচ করবে, কে কার সিদ্ধান্ত মানবে না মানবে, এই এই দ্বন্দ্বে আমরা যদি যাই, তাহলে একটি রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে চলতে হলে তিনটি অঙ্গকেই যথাযথভাবে তার কর্মপরিকল্পনা চালাতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সকলের কিছু কিছু ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতাটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আমরা কতটুকু প্রয়োগ করতে পারি জনস্বার্থের পক্ষে, আর কতটুকু করা উচিত না, বা করলে জনস্বার্থ ব্যাহত হতে পারে বা তিনটি অঙ্গের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হতে পারে, এই বিবেচনাটা সকল পক্ষে থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।’
শেখ হাসিনা বলেনম ‘একটা রাষ্ট্র সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে তখনই যখন এই তিনটি অঙ্গের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক এবং একটা সমঝোতা থাকবে।’
প্রধান বিচারপতিকে না জানিয়ে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত আইন করার বিষয়ে জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন একটা আইন প্রণয়ন করি, এটা কিন্তু দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসে। আমরা হঠাৎ করে পার্লামেন্টে আইন পাস করি না।’ এরপর আইন প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়া বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আইন প্রণয়ন করছে। এই আইন প্রণয়নের সময় জনপ্রতিনিধিদেরকে সতর্ক থাকতে হয়, কোনোভাবে যেন জনস্বার্থ ক্ষুন্ন না হয়। সেই আইন যদি দেখি দুই জন বসে নাকচ করে দিলেন, এরপর কিছু করার থাকলো না, তাহলে এতদিন ধরে খাটাখাটুনি, সরকারি অফিসার থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত সবাই মিলে যে খাটাখাটনি করলেন, সব কিন্তু ব্যর্থ হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রেও বোধ হয় বিবেচনা করা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।’
আদালত সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে কথা থাকলে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলতে প্রধান বিচারপতিকে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দেয়া এবং বিচারপতি নিয়োগ দেয়া। এখানে আমার কোনো ক্ষমতা নেই। রাষ্ট্রপতি সংবিধানেই আছে, যখন তিনি বিচারপতি নিয়োগ দেন, তখন তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এখানে কোনো রকম কিছু হলে আমার মনে হয় বিষয়টা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সমাধান করাই ভাল। সেটা করলেই পরে যথাযথ হবে বলে আমি মনে করি। এই ক্ষেত্রে আমাদের যদি কিছু করণীয় থাক, তাহলে আমরা তা দেখবো।’
কুখ্যাত অপরাধীর বিচার কারাগার ভিডিও কনফারেন্সে
দুর্ধর্ষ অপরাধীদেরকে আদালতে আনার বদলে কারাগারে রেখেই ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমেও যেন বিচার করার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেনম ‘সবচেয়ে দুর্ধর্ষ আসামিদেরকে টানাটানি করা কঠিন কাজ। কেরানিগঞ্জে যে জেলখানা করা হয়েছে, সেখানে আমি নির্দেশ দিয়েছি, সেখানে বিশেষ আদালতের রুম করে দেয়া, যেন এই জায়গায় বসিয়ে ঢাকা থেকে বিচার কার্যক্রম করা যেতে পারে। আসামিদেরকে নিয়ে যেন টানাটানি করতে না হয়। সেখানে আইনজীবীরা থাকবেন, যার যার প্রয়োজন তারা সবাই থাকবেন, সে ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি।’