ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুদ, বিক্রি সবই যখন নিষিদ্ধ তখন রাজধানীর সব খুচরা বাজারের পাশাপাশি সুপার শপগুলোতেও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। নববর্ষকে সামনে রেখে গত কয়েক দিন ধরে এই ইলিশের কথা বলে ব্যাপক বিজ্ঞাপনও প্রচার করছে সুপার শপগুলো। পোস্টারিং এর পাশাপাশি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন এমনকি গ্রাহকদের মোবাইল ফোনে ইলিশের দাম কত সে কথা বলে এসএমএসও পাঠাচ্ছে শপগুলো।
ইলিশ প্রজননে সুবিধার জন্য গত ১ মার্চ থেকে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এটা বলবৎ থাকবে। এর মধ্যে ১৪ এপ্রিল উদযাপন হবে বাংলা নববর্ষ। আর এই সময় ইলিশের একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে।
৯০ দশক থেকেই নববর্ষে পান্তার সঙ্গে ইলিশের প্রচলন শুরু হয়। বছর বছর এই আয়োজন বাড়তে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি আবার এর বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচারও চালাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার নববর্ষের আপ্যায়নে ইলিশ না রাখার ঘোষণা দিয়েছেন গত বছর থেকে।
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে চলতি বছর ইলিশ নিয়ে আগের মত মাতামাতির খবর আসছে না। চাহিদা কমায় বছরের এই সময়ে অন্যান্য বছর যে দামে রূপালি মাছটি বিক্রি হতো, এবার তার চেয়ে কিছুটা কম দাম চাইছে বিক্রেতারা।
তবে আইন মানা হলে দাম কম বা বেশির প্রসঙ্গ আসতই না। কারণ, এই সময় বিক্রিই হতো না ইলিশ।
রাজধানীর মগবাজারে আগোরা সুপার শপে গিয়ে ইলিশ বিক্রি হতে দেখা গেছে। পিস প্রতি ৫০০ গ্রাম ইলিশের দাম তারা রাখছে ৭৫০ টাকা। ৮০০ গ্রামের হলে দাম হয় এক হাজার টাকা। আর এক কেজির বেশি হলে বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজারেরও বেশি।
স্বপ্ন সুপার শপেও ইলিশ বিক্রি করতে দেখা গেছে। এখানে বড় আকারের প্রতি হালি (৯০০ গ্রাম) ইলিশ বিক্রয় হতে দেখা গেছে চার হাজার ৮০০ টাকায়। ছোট আকারের (১৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম) ইলিশের হালি বিক্রয় হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকায়। ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রিয় হচ্ছে তিন হাজার ছয়শো টাকায়।
মিনা বাজারেও বিক্রি হতে দেখা গেছে ইলিশ। এখানে দাম অন্য দুটির তুলনায় কিছুটা কম। এখানে ছোট আকারের ইলিশ হালি প্রতি বিক্রয় হচ্ছে এক হাজার ৬০০ টাকায়। মাঝারি আকারের দাম দুই হাজার ৪০০ আর বড় আকারের হলে চার হাজার ১০০ টাকায়।
রাজধানীর নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় প্রাণ এর সুপার শপ ডেইলি শপিং এও বিক্রি করা হয় ইলিশ। একই এলাকার সজীব গ্রুপের ওয়ান শপেও ইলিশ বিক্রি চলছে দেদারসে।
নিষিদ্ধ হলেও কেন ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে-জানতে চাইলে মীনা বাজার সুপার শপের কোনো কর্মকর্তা কিছু বলতে রাজি হননি।
সুপার শপ স্বপ্নের মগবাজার শাখার একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখন দেশে ইলিশ ধরা বন্ধ। কিন্তু অপরদিকে আগামীকাল পহেলা বৈশাখ। এই কারণে এখন ইলিশের চাহিদাও বেশি। তাই আমরা আসলে গ্রাহক চাহিদার কথা ভেবে বেচতে বাধ্য হই।’
ইলিশ বিক্রি নিষিদ্ধ সময়ে মাছটি বিক্রির দায়ে বাজারে নানা সময় অভিযান চালায় মৎস্য অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব। তবে সুপার শপগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদাহরণ নেই বললেই চলে।
জানতে চাইলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম বলেন, ‘যেহেতু এখন সরকারি ভাবে ইলিশ ধরা বন্ধ তাই সুপার শপগুলোতে ইলিশ থাকার কথা নয়।’
সরোয়ার আলম বলেন, ‘যদি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কেউ ইলিশ ধরে বিক্রি করে বা প্রদর্শন করে, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। তবে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এই ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আসেনি।’