হাইকোর্ট মোবাইলফোন কোম্পানিগুলোর টাওয়ার কীভাবে ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরির জন্য বিটিআরসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন মনজিল মোরসেদ। তিনি বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত বিকিরণে মানব স্বাস্থ্যর ঝুঁকি আছে কি না তা নিরূপণে বিশ্ব স্বাস্থ্যসহ তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। ১০ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। একইসঙ্গে বাংলাদেশে মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত বিকিরণ (তেজস্ক্রিয়তা) নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বিটিআরসিকে একই সময়ের মধ্যে জানাতে নির্দেশ দেয়া হয়।
মোবাইল ফোন টাওয়ারের রিডিয়েশন বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রতিবেদন গত ২২ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে উপস্থাপন করে। সেখানে বলা হয়- বাংলাদেশে মোবাইলফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন (বিকীরণ) এর মাত্রা উচ্চ পর্যায়ের, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সারাদেশে ছয়টি টাওয়ার পরীক্ষা করে একটিতে উচ্চমাত্রার বিকীরণ পাওয়া গেছে। এই রেডিয়েশনের মাত্রা কমাতে বিটিআরসিকে নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে বলে আদালতকে জানানো হয়।
ওই দিন আদালত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনটি আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে হলফনামা আকারে জমা দিতে নির্দেশ দেন। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন সেটিও এর মধ্যে আদালতকে জানাতে বলা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মোবাইলফোনের টাওয়ারের রেডিয়েশন নিঃসরণ নিয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে রিট করে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রেডিয়েশনের মাত্রা এবং এর স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত প্রভাব খতিয়ে দেখতে নির্দেশ।
বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির কয়েকটি মোবাইল ফোন টাওয়ার পরিদর্শন করে রেডিয়েশন বিষয়ে আদালতে একটি প্রতিবেদন দিতে বলেন। এছাড়াও সাত দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করতে স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়। এই কমিটিতে বিজ্ঞানী, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের অধ্যাপক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং আণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধিরা থাকবেন। এই কমিটিকে মোবাইল টাওয়ার থেকে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশগত প্রভাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারগুলো থেকে নিঃসৃত রেডিয়েশন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশনা দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চায় হাইকোর্ট।