শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে খুলনা অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর খুলনা-কলকাতা থেকে যাত্রীবাহী লাল-সবুজ ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল । ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সেতুবন্ধন ও যাত্রীসেবা বাড়াতে দ্বিতীয় মৈত্রী ট্রেনটি চালু হচ্ছে।
শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ এক্সপ্রেস ট্রেনটি উদ্বোধন করবেন। সকাল ৮টায় খুলনা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫টি বগি নিয়ে এ ট্রেন কলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। তবে আনুষ্ঠানিকতা বেনাপোল রেল স্টেশনে হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ৮ এপ্রিল দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করবেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী। বেনাপোল রেলস্টেশনে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। রেলমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি উদ্বোধন করবেন দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানিয়েছে, এ রুটে ট্রেন চলাচলের জন্য দুই দেশে অবকাঠামো নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি শেষের পথে। ৮ এপ্রিল সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে খুলনা থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫টি বগি নিয়ে একটি ট্রেন কলকাতার উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিক যাত্রা করবে। পরদিন সকালে ওই ট্রেনটিই ফিরবে কলকাতা থেকে।
তবে উদ্বোধনী এ ট্রেনে কোনো সাধারণ যাত্রী থাকবেন না। থাকবেন পদস্থ কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি কলকাতায় যাতায়াত শুরু করবে।
খুলনা ও কলকাতায় রেলস্টেশনে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রীট্রেন চালানোর যাবতীয় অবকাঠামোগত সুবিধা রয়েছে। বেনাপোল এবং ওপারের পেট্রাপোলে নতুন করে পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও রেল পুলিশের জন্য কক্ষ নির্মাণ। বেনাপোলে এ খাতে নির্মাণে ব্যয় করা হয় দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা।
রেলওয়ের সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী বগি ও ইঞ্জিন স্বল্পতার কারণে শুরুতে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভারতীয় ইঞ্জিন ও রেক দিয়ে চলাচল করবে। ট্রেনটি উদ্বোধন হলে খুলনা-কলকাতা ১৫০ কিলোমিটার রেলপথ মাত্র তিন ঘণ্টায় চলাচল সম্ভব হবে। এটি খুলনা-যশোর-বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ হয়ে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে পৌঁছাবে। উদ্বোধনের পর থেকে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি সপ্তাহে ১ দিন চলাচল করবে। পরে ট্রিপ বাড়ানো হবে। তিন ঘণ্টার মধ্যে ব্যবসায়ী, পর্যটক, রোগীরা কলকাতায় পৌঁছাতে পারবে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সম্প্রসারণ ঘটবে। দু’দেশের মানুষ যাতে আরও অল্প খরচে, স্বল্প সময়ে ও নিরাপদে স্বাচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারেন সেলক্ষ্যে উভয় দেশের কর্মকর্তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) ভারতের পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার এসএন আগরওয়াল ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত স্টেশন পরিদর্শন করেন। তিনি সেখানে জানান, ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বেনাপোল-পেট্রাপোল স্টেশন দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ওইদিন বাংলাদেশ থেকে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন ভারতের পেট্রাপোলে যাবে। এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে শুরু হবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান জানান, প্রথমাবস্থায় যশোর জংশন, বেনাপোল ও নওয়াপাড়া স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট থেকে যাত্রীরা এ ট্রেনে চড়তে পারবেন না। পরে অবস্থা বিবেচনা করে ট্রেনের ট্রিপ ও স্টেশন সংখ্যা বাড়ানো হবে জানিয়েছেন অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, যশোর জংশনে আন্তর্জাতিক এই ট্রেনের স্টপেজ থাকছে।
যশোর রেল জংশনের মাস্টার পু®পল কুমার চক্রবর্তী ঢাকাটাইমসকে জানান, খুলনা-কলকাতা ট্রেন চলাচল সংক্রান্ত কোনো নিদের্শনা তার হাতে পৌঁছেনি। চিঠি পেলে স্টেশনে পৃথক কাউন্টারসহ আনুষাঙ্গিক কক্ষ করতে হবে। তিনি আশা করেন আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে নতুন এ রুটে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে মাধ্যমে তিনি এ জাতীয় ইঙ্গিত পেয়েছেন বলে দাবি করেন।
বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার শাহিদুর রহমান জানান, খুলনা স্টেশন থেকে যাত্রীরা ট্রেনে চড়ে বেনাপোল পৌঁছাবেন। পরে বেনাপোল রেলস্টেশনে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের বুথে যাত্রীদের পাসপোর্ট ও ব্যাগেজ তল্লাশির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাবে ট্রেনটি। সেখানেও ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের পাসপোর্ট ও ব্যাগেজ তল্লাশি হয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে ট্রেনটি।
খুলনার স্টেশন মাষ্টার কাজী আমিরুল ইসলাম জানান, সকাল ৮টায় খুলনা থেকে বেনাপোলের উদ্যেশ্যে ছেড়ে যাবে খুলনা-কলকাতা দিতীয় মৈত্রী ট্রেন।