প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পেতে ভারতের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে এখনো আশাবাদী । তবে ভারতের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা পিটিআই সরকারি বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এ সফরে তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুতে চুক্তি স্বাক্ষরের কোনো সম্ভাবনা নেই।
শুক্রবার দুপুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে হাজির থেকে ইন্দিরা গান্ধী বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান। ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবারই শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত গেলেন। তিস্তার পানি এবং সামরিক সহায়তা ইস্যু নিয়ে বহুল আলোচিত এই সফরের আনুষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড শুরু হবে শনিবার সকালে।
ব্যাপক আলোচিত তিস্তা নদীর পানিবণ্টনসংক্রান্ত কোনো চুক্তি না হলেও বেসামরিক খাতে পরমাণু প্রযুক্তি, সামরিক সহায়তা খাতসহ ২৫টি খাতে চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে শনিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাথেও পৃথক বৈঠকে বসতে পারেন শেখ হাসিনা।
তবে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে এখনো আশাবাদী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শেখ হাসিনা বলেন, মমতা কাল (শনিবার) দিল্লি এলে আলাদা বৈঠক হতে পারে। তিস্তা চুক্তির কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখি কী হয়। আমি সব বিষয়েই আশাবাদী’।
মমতার সাথে তার বৈঠক শনিবার রাতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সভা-অনুষ্ঠানের পরে হতে পারে বলে জানান, শেখ হাসিনা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় আশাবাদী। দেখি কী হয়।’
তবে ভারতের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা পিটিআই এক ভারতীয় কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ‘সফরে অনেক কিছু হবে, কিন্তু তিস্তার পানি নিয়ে কিছু নয়’।
ভারতীয় কর্মকর্তা বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর পূর্ণ সহমত না নিয়ে, দিল্লির সরকার বাংলাদেশের সাথে তিস্তা চুক্তি করবে না। তিস্তায় পর্যাপ্ত পানি নেই বলে দীর্ঘদিন থেকে মমতা এই চুক্তির বিরোধিতা করছেন’।
এদিকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার-বাংলাদেশ বিষয়ক ডেস্কের জয়েন্ট সেক্রেটারি শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার এই সফর খুবই বিশেষ। দুই দেশের সম্পর্ক এ সফরের মধ্য দিয়ে নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক।’
তিস্তা চুক্তি বিষয়ে শ্রীপ্রিয়া বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি নিয়ে প্রক্রিয়া চলমান আছে। তবে আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি।’
শনিবার নরেন্দ্র মোদির সাথে বৈঠকে শেখ হাসিনা নিশ্চয় তিস্তার পানির বিষয়টি উত্থাপন করবেন। কিন্তু তাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে না বলেই মনে হচ্ছে। শ্রীপ্রিয়া জানিয়েছেন, মোদি-হাসিনা বৈঠকের চুক্তি সম্পাদন অনুষ্ঠান এবং হাসিনার সম্মানে রাখা লাঞ্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন মমতা।
২০১১ সালেই তিস্তা চুক্তি হতে পারত। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফরকালে তিস্তা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার প্রস্তুতি নিয়েই এসেছিলেন, কিন্তু শেষমুহূর্তে মমতার বিরোধিতার জন্য তিস্তা চুক্তি আর সম্পদিত হয়নি। তিস্তা চুক্তি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময়ে তিস্তার নদীর বাংলাদেশ অংশে পানির প্রবাহ পাঁচ হাজার থেকে ১০০০ কিউসেক পর্যন্ত নেমে আসে।
হাসিনা-মোদি বৈঠকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে বাংলাদেশে সামরিক সরবরাহ সংক্রান্ত ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ভারতীয় ঋণ সহায়তা সংক্রান্ত দলিল স্বাক্ষর পর্ব।
হাসিনা-মোদি বৈঠকের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর হবে বেসামরিক খাতে পরমাণু প্রযুক্তি সহায়তা বিষয়ে। এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে, ভারত বাংলাদেশে পরমাণু রিয়েক্টর স্থাপন করতে সহায়তা দেবে।