হু হু করে উত্তরের আলোচিত নদী তিস্তায় পানি বাড়ছে । খুলে দেয়া হয়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট। চার দিনের ব্যবধানে নদী ভরে পানি উপচে পড়েছে তীরে। ডুবে গেছে শাক সবজি আর ফসলে ভরা তিস্তার বালুচর।

গত রবিবার থেকে তিস্তার পানি হঠাৎ বাড়তে শুরু করে। ওইদিন রাতে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে পানির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় এক হাজার চারশ কিউসেক। পরদিন সোমবার দুপুরে ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার সাতশ কিউসেক।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা ও পূর্বাভাস সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত পানি এক লাফে বৃদ্ধি প্রায় দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার চরে রোপন করা ভুট্টা ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ ও রসুনের ক্ষেত ডুবে যাওয়ায় অনেক কৃষকের চোখে মুখে হতাশাও লক্ষ্য করা যায়।

তিস্তা পাড়ের মহিষখোচা এলাকার ভুট্টা চাষি আলাল উদ্দিন ও জসিম উদ্দিন জানান, ভুট্টা গাছ ও বোরো ধানের গাছ পানি পেয়ে সতেজ হয়ে উঠছে। তবে পেঁয়াজ চাষি শাহজাহান মিয়া বলেন, তার ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ফসল হঠাৎ পানিতে ডুবে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি।

নৌকার মাঝি মেহের আলী বললেন, বালুচরে পড়ে থাকা তাদের নৌকাগুলো পানি পেয়ে চলতে শুরু করেছে। মাছ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলেরা।

দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে আগে তিস্তায় পানি বাড়ায় এলাকায় তৈরি হয়েছে আশার সঞ্চার। তিস্তান পানি বণ্টনে এবারের সফরে সুনির্দিষ্ট ঘোষণার আশা করছেন তিস্তা পারের মানুষ।

তিস্তা ব্যারাজ কমান্ড এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রফিউল বারী জানান, পানির অভাবে সেচ প্রকল্প থেকে বাদ পড়া দিনাজপুর ও রংপুরের কমান্ড এলাকার প্রতিটি খাল পানিতে ভরিয়ে দেয়া হয়েছে।

১৯৮৯ সালে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী নামক স্থানে তিস্তা নদীর উপর প্রায় দেড় হাজার টাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্প ’তিস্তা ব্যারাজ’ নির্মিত। এ প্রকল্পের উত্তরের আট জেলার ৩৫টি উপজেলার প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমি ইরি-বোরো মৌসুমে সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

কিন্তু তিস্তা ব্যারাজের একশ কিলোমিটার উজানে ভারত গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি আটকে দেওয়ার কারনে গোটা প্রকল্পে ভাটা পড়ে। পরে সে সময় মাত্র ৬৫ হাজার হেক্টর জমি নিয়ে সেচ প্রকল্প কার্যক্রম শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তাও পানির অভাবে প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। ফলে তিস্তা পারের হাজার হাজার হেক্টর জমি ইরি-বোরো মৌসুমে পতিত থাকে। শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ যেখানে ২০ হাজার কিউসেক পানির প্রয়োজন সেখানে বাংলাদেশ পায় মাত্র প্রায় এক হাজার কিউসেক।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031