তিন দিন আগের তুলনায় পানি আসছে তিন গুণেরও বেশি। উত্তরের অন্যতম প্রধান নদী তিস্তায় হঠাৎ বেড়েছে পানিপ্রবাহ। আগামী শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগে আগে এই পানিবৃদ্ধি আলোচনার খোরাক জুগিয়েছে স্থানীয় জনগণের মধ্যে। তারা এই সফরে তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি বা সুনির্দিষ্ট ঘোষণার আশা করছেন।

আগামী শুক্রবার চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে আটকে থাকা তিস্তা চুক্তি হয় কি না-এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আগ্রহের কেন্দ্রে। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে কোনো আশার কথা বলা হয়নি।

ওদিকে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আগামী মে মাসে এ নিয়ে চুক্তি হতে পারে বলে জেনেছেন তিনি। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তার সঙ্গে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি।

ভারতের গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় মমতা বন্দোপাধ্যায়কেও আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে।

এদিকে তিস্তা সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, রবিবার সন্ধ্যার পর থেকেই লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে পানি বাড়তে থাকে। রাতেই পানির পরিমাণ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ০৫ পয়েন্ট। পরের দিন সোমবার দুপুরে পানি বেড়ে দাঁড়ায়  ৫২.০৫ পয়েন্ট। মোট পানির পরিমাণ দাড়ায় দুই হাজার সাতশ কিউসেক।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও ব্যারেজ পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল মাত্র ৬০০ থেকে ৮০০ কিউসেক। হঠাৎ রোববার সন্ধা থেকে পানি বেড়ে যায়। সোমবার দুপুরে পানি বেড়ে দাড়ায় ২৭০০ কিউসেক।’

বোরো মৌসুমে নদীতে পানি আসায় তিস্তার চর ও দুই পাড়ের শত শত কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসির ঝলক। এদের একজন রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ তিস্তা নদীত পানি বাড়ায় হামরা খুব খুশি। আশা করোছি প্রত্যেক বছর এইনক্যা (এ রকম) পানি পামো। প্রধানমন্ত্রীর সফরে যেন  চুক্তি অয়।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, শুকনো মৌসুমে নদীতে এই পরিমাণে পানি প্রবাহ অব্যাহত থাকলে ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া যেত। কিন্তু পানি না থাকায় এ বছর ব্যারেজের রংপুর ও দিনাজপুর কমান্ড এরিয়া বাদ দিয়ে চাষাবাদ শুরু হয়েছে। যাতে শত শত কৃষক পানি থেকে বঞ্চিত হয়ে চাষাবাদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

হঠাৎ পানি বৃদ্ধির ফলে বন্ধ থাকা তিস্তা ব্যারাজের কয়েকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে তিস্তার বালু চর ডুবে গেছে। তিস্তার চরে রোপন করা ভুট্টা ক্ষেত পানিতে ভরে উঠায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে সবজিসহ মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজ ও রসুনের ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ায় হতাশাও লক্ষ্য করা গেছে কৃষক পরিবারগুলোতে।

হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণ কী-জানতে চাইলে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর জানান, ব্যারেজের উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভারত গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দিয়েছে। এ কারণেই পানি বেড়েছে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031