ফুচকা গিলতে দেখা যায় অনেককে চট্টগ্রামে অলিগলি ও পার্কগুলোতে আয়েশ করে । এরমধ্যে ফুচকা শিশুর সংখ্যাই বেশি। রয়েছে তরুণীরাও। এ যেন এক মস্ত মজাদার খাবার।
শিশুরা যখন বলে ফুচকা খাব। মা-বাবারা শিশু সন্তানের আব্দার মেটাতে দু‘হাত উজার করে দেন। হয় রাস্তায়, না হয় দোকানে; যেখানে খেতে শুরু করেন ফুচকা। যেখানেই খান না কেন এই ফুচকা যে পায়ে দলে, শরীরের ঘামে তৈরী হচ্ছে তা কি দেখেছেন কেউ। অন্তত এ দৃশ্য দেখলে কেউ জীবনেও ফুচকা খাবেন না।
এর বাইরে রয়েছে নানা রকম রাসায়নিক দ্রব্যের ভেজাল। ছোট্ট ফুচকাকে মচমচে ও ফুলাতে ব্যবহার করা হয় অ্যামোনিয়াম পার আক্সাইড। যেটা খেলে মরণব্যাধি হেপাটাইটাসি বি ভাইরাসে আক্রান্ত হবে এটা নিশ্চিত করে বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
চট্টগ্রামের ডক্টরস ল্যাবের শিশু রোগের চিকিৎসক মৃণাল কান্তি দাশ বলেছেন, ফুচকা ফুলার জন্য এবং শক্ত রাখতে প্রস্তুতকারকরা অ্যামোনিয়াম এসিড ও অ্যমোনিয়াম পার অক্সাইড ব্যবহার করে। যা শরীরের লিভার ভাইরাসে আক্রান্ত হবেই। আর এই ভাইরাস হচ্ছে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস। যেটা আক্রান্ত হলে স্বল্প সময়ে নিশ্চিত মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে শিশু ও নারীরা সবচেয়ে বেশি হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ সংখ্যা দিন দিন হুহু করে বাড়ছে। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন শিশু ও নারীরা চিকিৎনা নিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছে। যা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, শিশু-কিশোর-মহিলাদের কাছে অতি সুস্বাদু এক আকর্ষণীয় খাবার ফুচকা। আমি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্কুলের সামনে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের লাইন ধরে অস্বাস্থ্যকর এই ফুচকা, আচার ও বিভিন্ন নোংরা খাবার কিনে খেতে দেখেছি। আশ্চর্যের ব্যাপার- মা-বাবারা তাঁদের সন্তানদের প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে খাবার নামের এসব বিষ কিনে দেন, নিজেরাও খান।
তিনি আরও বলেন, এই ফুচকা খাওয়ার স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ঝুঁকি ও বিপদ নিয়ে আমি অনেক লেখালেখি করেছি। আমার এক বন্ধুর ছেলে স্কুলের সামনে ফুচকা খেয়ে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় মরতে বসেছিল।
আমি মাঝে মাঝে চোখে পড়লেই শিশুদের এসব খাবার খেতে নিষেধ করি। ওদের কেউ কেউ শোনে, কেউ আবার শোনেও না। স্কুলের সামনে কর্তৃপক্ষ কী করে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি করার অনুমতি দেয়-তাও আমার বুঝতে কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, শিশুরা অবুঝ হতে পারে। কিন্তু শিক্ষিত মা-বাবারা কেন একটুও ভাবেন না যে, এইসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার কারণে তাদের সন্তানরা মারাতœক রোগে আক্রান্ত হতে পারে, এমনকি মারাও যেতে পারে। অনেকেই হয়ত জানেন না যে, যে তেলে ফুচকা ভাজা হয়, তা পোড়া তেল এবং পোড়া তেল মানে ট্রান্স ফ্যাট, যা খেলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক অবশ্যম্ভাবী।
মনে রাখবেন, এভাবে তৈরি ফুচকা অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্টেও সরবরাহ করা হয়। শুধু ফুচকা নয়, আরো হাজারো রকম খাবার এদেশে এই পদ্ধতিতেই প্রস্তুত হয়ে থাকে। যেগুলো খেয়ে আমরা নিজেরাই মৃত্যুকে কাছে টানছি।