যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী মন্ত্রী–এমপিদের মধ্যেও ‘কাউয়া’ আছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, কাউয়া এসেছে, কাউয়া ঢুকেছে বলে চিৎকার করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা কাম্য নয়। আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের ভালোবাসা এবং আগ্রহ আছে। এই সংগঠনে অনেকেই আসবে। মিষ্টি থাকলে পিঁপড়ার আগমন ঘটবে। পিঁপড়ার আগমনে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
গতকাল শুক্রবার নগরীর হোটেল আগ্রাবাদে সাংবাদিকদের সাথে এবং চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সাথে পৃথক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সংগঠনে কোন্দলের প্রসঙ্গে যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এখন বক্তৃতার মধ্যেও কাউয়া তত্ত্ব নিয়ে আসি। অথচ কাউয়া হচ্ছে পরোপকারী। কাউয়ার মতো ভ্রাতৃত্ববোধ পৃথিবীর আর কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। বাংলাদেশের প্রায় মন্ত্রী, প্রায় এমপি, প্রায় উপদেষ্টা বলেন, এদের মধ্যেও তো কাউয়ারা আছেন। এই যে কাউয়া তত্ত্ব বললেন, ঘরের ভেতরে ঘর বানানো যাবে না। ঘরের ভেতর ঘর তৈরি যে হয়ে গেছে, সেটা নিয়ে কথা বলেন না কেন? মশারির ভেতরে মশারির কথা বলেন, ভালো কথা। কিন্তু সেগুলো তো ঠিক করা দরকার।
তিনি বলেন, আসলে আমরা সমর্থন চাই, পরামর্শ শুনি না। সরকারের কাছে চিকেন আছে, খাইতে তো আসবেই। হাড্ডি খাইতেও আসবে কাউয়ারা, মাংস খেতেও আসবে। কিন্তু সেটা তো হাই কমান্ড ঠিক করবে কাউয়াদের জায়গা। বক্তব্য অনেক দেয়া যায়। আমরা বাদীর কথা শুনি, বিবাদীর কথা শুনি না। অথচ আমাদের কাজ হচ্ছে আমাদের বিষয় হচ্ছে, মশারির ভেতরে যাতে কেউ মশারি টানতে না পারে সেটা দেখা। ঘরের ভেতরে ঘর যাতে কেউ বানাতে না পারে, সেটা দেখা। কোন্দলগুলো মেটানো। সেটা কি আমরা করছি?
তিনি বলেন, যুবলীগের কাজ হলো সারা দেশের নেতাকর্মীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করা। নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মীয়তা স্থাপন করা। আমাদেরকে মশারির মধ্যে মশারি, পাতিলের মধ্যে পাতিল সৃষ্টি করা উচিত নয়।
নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় ওমর ফারুক বলেন, সুখী, সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র গঠন করতে কখন কাকে প্রয়োজন সেটি নির্ধারণ করবে হাই কমান্ড। একটি নিরাপদ, শান্তিপ্রিয়, সমৃদ্ধশালী মানবকল্যাণমূলক দেশ বা সমাজ গঠনে রাসুল (সা.) যে নীতিগুলো গভীর অনুধাবন করে উদ্ভাবন করেছেন তা হলো ১. একটি আদর্শ, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেই সেই আদর্শ। কেননা আদর্শ ছাড়া কোনো আন্দোলন স্থায়িত্ব বা পূর্ণতা পায় না। ২. বিশ্বস্ত একনিষ্ঠ কর্মী, হযরত আবু বক্কর (রা.) ছিলেন একজন বিশ্বস্ত ও একনিষ্ঠ কর্মী। ৩. পেশিশক্তি বা ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, হযরত ওমর ফারুক (রা.) ছিলেন প্রচণ্ড সাহসী এবং পেশিশক্তিধর ব্যক্তি। রাসুল (সা.) যার ব্যাপারে দোয়া করেছিলেন। ৪. জ্ঞানী, গুণী ও বিদ্যান ব্যক্তি। হযরত আলী ছিলেন জ্ঞান গরিমায় অনন্য। কেননা রাসুল (সা.) বলেন, আমি জ্ঞানের শহর। আর সেই শহরে প্রবেশদ্বার হচ্ছে আলী। ৫. অর্থনৈতিক শক্তিধর হযরত ওসমান (রা.) ছিলেন তৎকালীন আরবে সবচেয়ে বড় বিত্তবানদের একজন। যার কারণে তাঁর নাম দেয়া হয় গণি। গণি শব্দের অর্থ ধনী ব্যক্তি। ৬. কবি, সাহিত্যিক হযরত হাস্সান–বিন–সাবিতকে (রা.) রাসুল (সা.) অনেক বেশি ভালবাসতেন এবং তাঁর থেকে কবিতা শুনতেন। কেননা হাস্সান–বিন–সাবিত ছিলেন সেই সময়ের সেরা কবিদের মধ্যে একজন। রাসুল্লাহ (সা.) নেতৃত্ব প্রসঙ্গে যে নীতি অবলম্বন করেছেন তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং অনুসরণীয়। সে জন্য কখন কাকে সংগঠনে প্রয়োজন সেটি নির্ধারণ করবে দলীয় হাই কমান্ড।
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বজুড়ে এখন যেটা চলছে, যে যত বেশি নেগেটিভ কথা বলতে পারবেন, তিনি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। দেখেন ট্রাম্প, মোদি। যে যত বেশি উদ্ভট কথা বলতে পারবে সে–ই জনপ্রিয়।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেখেন, শেখ হাসিনা যে ভারত সফরে যাচ্ছেন, তখনই কিন্তু জঙ্গিবিরোধী এই অপারেশনগুলো বাড়ল। জঙ্গিদের আস্তানাগুলোর কী অবস্থা দেখেন। অর্থাৎ মানুষের মনোযোগ ভিন্নখাতে নেয়া। আমাদের উত্তেজিত করা, আমরা যেন ভারত সম্পর্কে কটূক্তি করি।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াই এই জঙ্গি উৎপাদনকারী কারখানার মালিক। এটা বেগম খালেদা জিয়ার মানসিক, আদর্শিক ও নীতিগত অবস্থান। জঙ্গি হচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরের কাঁচামালে বাংলাদেশের কারখানায় পাকিস্তানি যন্ত্রে তৈরি। সব জঙ্গি তো হোম মেইড। কোথায় আইএস? মেড বাই বিএনপি–জামায়াত। আইএস ব্র্যান্ড তারা ব্যবহার করছে। কারখানার মালিক কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া।
উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগরের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে পর পর তিনবার বিজয় করার জন্য যুবলীগ সারা দেশে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ আছে, যেখানে জনগণের ক্ষমতা নেই, ভোটের অধিকার নেই। শেখ হাসিনা দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করেছেন, পাশাপাশি জনগণের ক্ষমতায়নও করেছেন। যুবলীগের দায়িত্ব হলো যে যে ক্ষেত্রে যোগ্য তাকে কাজে লাগানো এবং সরকার যেসব খাতে এগিয়ে গেছে, উন্নতি করেছে, সেগুলো সম্পর্কে জানা এবং জনগণকে বোঝানো। আমরা একসময় খাদ্য আমদানি করতাম। কিন্তু এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাইরে রপ্তানিও করছি। আমাদের কৃষি উৎপাদনে বৈচিত্র্য এসেছে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে আমরা বারমাসি ফুল, ফল, শাকসবজি, মৎস্য–পোল্ট্রি উৎপাদন করছি। সনাতনী ধারার রাজনীতি আমাদেরকে বাদ দিতে হবে। বিভাজনের রাজনীতি, মিথ্যাচারের রাজনীতি, বিদ্বেষমূলক রাজনীতি এখন মানুষ আর পছন্দ করে না। যার যতটুকু যোগ্যতা, যার যতটুকু শ্রম, তাকে তার প্রাপ্য সম্মান এবং মূল্যায়ন করতে হবে। কথার রাজনীতি বাদ দিয়ে কাজের রাজনীতি করতে হবে। কাজের রাজনীতি করতে হলে বেশি বেশি গণমুখী কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। কর্মসূচি দিয়েই জনমত নিজের অনুকূলে আনতে হবে। আগামী নির্বাচনে নবীন–প্রবীণ সংগঠকের সমন্বয় করে প্রতিটি জেলা, থানা, ওয়ার্ড, ইউনিটের পাশাপাশি প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে কমিটি গঠন করে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
উত্তর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশেদুল আলমের পরিচালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ ম ম টিপু সুলতান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবলীগ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মো. সেলিম উদ্দিন, আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরী, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকা, ফরিদ মাহমুদ, দিদারুল আলম দিদার, মাহবুবুল হক সুমন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু প্রমুখ।