একটি বছর বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনের পর পেরিয়ে গেলো । এই সময়ের মধ্যেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি দলটি। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা আর ক্ষোভের কমতি নেই।
গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক অঙ্গন অনেকটাই শান্ত। বিএনপির আন্দোলন কেবল মুখে, রাজপথে নেই কর্মসূচি। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের কথাও সেভাবে শোনা যাচ্ছে না। এই হিসাবে ২০১৩ সাল থেকে শুরু করে গত বছরেই সবচেয়ে স্বস্তিতে কাটিয়েছে বিএনপি। এই পরিবেশেও কেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা যায়নি-এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটার নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। চেয়ারপারসন যখন চাইবেন তখনই বাকি পদ পূরণ করা হবে। তবে সহসাই কমিটির শূন্য পদ পূরণ হচ্ছে না এমনটাই শোনা গেছে।
বেশ কয়েক বছর বিলম্বের পর ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলন করে বিএনপি। সেদিন কেবল চেয়ারম্যান (বেগম খালেদা জিয়া) ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) পদে নির্বাচন হয়। পরে ধাপে ধাপে মহাসচিব, স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক নেতার ঢাউস কমিটি দেয় বিএনপি।
তারপরও দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে তিনটি পদসহ বেশ কিছু কমিটি এখনও অপূর্ণাঙ্গ রয়ে গেছে। এসব পদে কারা আসছেন সে নিয়ে আলোচনাও থেমে গেছে। তবে জাতীয় সম্মেলনের এক বছর পূর্তিতে আবার নতুন করে আলোচনা তৈরি হয়েছে বিষয়টি নিয়ে।
কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কাউন্সিলররা দায়িত্ব দিয়েছিলেন। পরে প্রায় সাড়ে চার মাস পর ৫০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। এসময় বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ঘোষণা করা হয় ১৭ জনের নাম। বলা হয়েছিল শিগগিরই চেয়ারপারসন বাকি দুজনের নাম ঘোষণা করবেন।
তখনই কাঙ্ক্ষিত পদ না পেয়ে তখন আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ বেশ কয়েকজন নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর পর আ স ম হান্নান শাহ মারা যাওয়ায় এখন স্থায়ী কমিটির আরও একটি পদ ফাঁকা হয়। এই ফাঁকা পদগুলো শিগগির পুরণ হবে- তার কোনো লক্ষণ নেই। এসব পদে আসতে আগ্রহী কয়েকজন শীর্ষ নেতা চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থায়ী কমিটি ছাড়াও এখনো শূন্য রয়েছে আন্তর্জাতিক বিষয়ট দুটি, ছাত্র ও সহ-ছাত্রবিষয়ক দুইটি এবং যুব-বিষয়ক সম্পাদকের একটি পদ।
শুরুর দিকে ছাত্র বিষয়ক ও যুব-বিষয়ক পদ নিয়ে অনেকের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা গেলেও এখন তারাও কিছুটা ঝিমিয়ে পড়েছেন।
যুবদলের সভাপতি পদে আগ্রহী হয়েও তা পাননি এক নেতা। এখন তিনি আশায় আছেন বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক পদ পাওয়ার। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘একবছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারা এটা যেভাবেই দেখা হোক তা লজ্জাজনক। আমরা আশা করবো সহসাই স্থায়ী কমিটির মতো বড় পদের ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত নিলেও সম্পাদকীয় শূন্য পদ পূরণ করা উচিত বলে নেতাকর্মীরা মনে করে।’
ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন বলেন, ‘কী কারণে একবছরেও এই পদগুলো পূরণ হয়নি তা আমরা জানি না। তবে এখনো আমরা এখনো আশা নিয়ে চেয়ারপারসন এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছি। আশা করি তারা শূন্য পদগুলোতে যোগ্যদের দিয়ে পূর্ণ করবেন। গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদগুলো পূরণ হলে নেতাকর্মীরা আরো সক্রিয় হবে।’
বিএনপির পূনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘টাইম ফ্রেম বেধে দিয়ে সাংগঠনিক কাজ হয় না। আর পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া,এটার কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ নেই। যেখানে সমস্যা দেখে দেবে সেখানেই কাজ হবে। এটার শেষ নাই।’
নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়নি এক বছরেও
একবছরেও বিএনপির নির্বাহী কমিটি একসঙ্গে সভা করতে পারেনি। যদিও গঠনতন্ত্র ছয়মাসে একবার বৈঠক করার নির্দেশনা আছে।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভাইস চেয়ারম্যান ও ১২ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টার খালেদা জিয়া বৈঠক করলেও অনেক নেতা অনুপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বেশিরভাগ পদ পূরণ হলেও কিছু পদ এখনো খালি আছে এটা ঠিক। তাই বলে তো দলের কার্যক্রম থেমে নেই। জেলা কমিটি হচ্ছে, অঙ্গ সংগঠনের কমিটি হচ্ছে। তবে আশা করি শিগগিরই চেয়ারপারসনসহ দায়িত্বশীল নেতারা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।’