এ যার অবস্থান বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, ধানমন্ডি ৩২ । রক্তমাখা ইতিহাস বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি, নিরিবিলি, চুপচাপ! স্তম্ভিত, হতবাক ভাবমূর্তি ঘিরে আছে বাড়িটিকে। অতর্কিত সেই সহিংসতার রেশ যেন এখনো কাটেনি। স্বাধীন দেশে নিজ আস্থাভাজনদের বিশ্বাসঘাতকতার বিস্ময় যেন এখনো মূর্তিমান।
বাড়িটি ইতিহাসের সাক্ষী। শুধু ১৫ আগষ্টের সেই নির্মম কালো রাত্রির জন্য নয়। বঙ্গবন্ধু তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন এখানে। এখান থেকেই স্বাধীকার আন্দোলনের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। ১৯৬২ সালের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফার আন্দোলন, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১-এর শুরুতে অসহযোগ আন্দোলন, এই সবগুলো ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা প্রণয়ন, দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা শোনা-এ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল ৩২ নম্বরের এই বাড়িটি।
দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরাও এই বাড়িতে ভিড় করেছেন ’৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে। ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’- ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই ভাষণের রূপরেখাটি বঙ্গবন্ধু তৈরি করেছিলেন এই বাড়ির কনফারেন্স টেবিলে বসে। স্বাধীনতা লাভের পর বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রপতি, তখনো তিনি এই বাড়িটি থেকে রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম পরিচালনা করতেন। এই বাড়ি থেকে অসংখ্যবার পাকিস্তানি সৈন্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ’৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে।
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করে। নাম দেয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়।
নানান স্মৃতিচিহ্নের সংগ্রহে সজ্জিত বাড়িটি দেখে আসতে পারেন আপনিও। ইতিহাসকে এত কাছ থেকে দেখা, অনুভব করার জন্য এটি চমৎকার জায়গা।
অবস্থান:
ঢাকার ধানমণ্ডি এলাকার লেকসার্কাসের পশ্চিম পাশে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে এই জাদুঘরটির অবস্থান।
ঠিকানা: বঙ্গবন্ধু ভবন, বাড়ি ১০, রোড ৩২ (পুরাতন), ১১ (নতুন)।
সময়সূচী:
বুধবার ছাড়া সপ্তাহের বাকি ৬ দিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
টিকিটের মূল্য:
পাঁচ টাকা। ১২ বছরের কম বয়সীরা টিকেট ছাড়া প্রবেশের সুযোগ পায়।