বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দেশবিরোধী চুক্তির আভাস পাচ্ছেন জানিয়ে সফরের আগেই চুক্তির বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছেন । তিনি বলেন, সমস্ত গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে দেশের বাইরে চুক্তি করতে যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মানিকগঞ্জে বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে এক স্মরণসভায় ফখরুল এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলছি, আলোচনার কথা, সংলাপের কথা। চুক্তির আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা, জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার জনগণের কাছে যেতে চায় না, প্রকাশও করতে চায় না। আমরা বারবার দাবি করে আসছি, যে কোনো চুক্তি জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে, জনগণকে জানাতে হবে এবং তা নৈতিক দায়িত্ব।’
আগামী ৭ এপ্রিল চার দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই সফরের আগে বিএনপির নেতারা রাজনৈতিক মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন। তাদের অভিযোগ সরকার ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থবিরোধী নিরাপত্তা চুক্তি করতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির নানা অভিযোগের জবাব দিয়ে বলেছেন, আসলে বিএনপিই ভারতের দালাল। তারা ভারতের কাছ থেকে কিছু আদায় করতে না পেরে ভারতবিরোধী শোর তুলে সব সময়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এই সফরে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি হবে না। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে যে কোনো চুক্তি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সফরে দেশবিরোধী চুক্তি হচ্ছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে চুক্তির কথা আমরা শুনতে পারছি, এই চুক্তি দেশের জন্য, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।’
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো চুক্তি বিএনপি মেনে নেবে না জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করেই বলেছি, বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী কোনো চুক্তিই এ দেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না। স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে কাজ করেছিল, একইভাবে সব ধরণের ষড়যন্ত্র এ দেশের মানুষ প্রতিহত করবে।’
এই সফরে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হচ্ছে-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন ঘোষণায় আস্থা নেই বিএনপির। ফখরুল, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে, এমন কোনো লক্ষণই তিনি দেখছেন না।
এর আগে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পাচুঁরিয়া এলাকায় খোন্দকার দেলোয়ারের সমাধিতে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বিএনপি নেতারা। এ সময় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মানিকগঞ্জ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মঈনুল ইসলাম শান্ত, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও খোন্দকার দেলোয়ারের ছেলে আব্দুল হামিদ ডাবল উপস্থিত ছিলেন।
খোন্দকার দেলোয়ারের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি বিরল রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। তিনি নীতির প্রশ্নে কোনো আপস করেননি। বাংলাদেশ ও দলের স্বার্থের জন্য তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। অত্যান্ত দুঃসময়ে তাঁকে দলের মহাসচিব করা হয়েছিল। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠা, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসের সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ফখরুল বলেন, খোন্দকার দেলোয়ার যখন বিএনপির দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তখন একটি অবৈধ ও অনৈতিক সরকার বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল। সেই সরকার বিএনপিকে বিভক্ত করার চেষ্টা করেছিল। আর সরকার বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল। খোন্দকার দেলোয়ার তার সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও দূরদর্শিতা দিয়ে সেই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছিলেন।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের সেই চক্রান্ত এখনও চলছে দাবি করে বিএনপি নেতা বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ জোর করে সরকারে বসে আছে। তাঁরা চক্রান্ত করছে বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে। খালেদা জিয়া ও নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁরা বিএনপিকে নিষ্ক্রিয় ও নির্মূল করতে চায়। কিন্তু ইতিহাস বলে, বাংলাদেশের মানুষ এই দলকে বিশ্বাস করে, বিএনপিকে কখনই নির্মূল করা সম্ভব হবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির ওপর বহুবার আঘাত এসেছে, কিন্তু বিএনপি সেই আঘাতকে সবসময় পরাজিত করে জেগে ওঠেছে, বিকশিত হয়েছে।’