মাস তিন আগেও মালিবাগ-মৌচাক হয়ে অফিসে আসতাম। যানজটের কারণে ওই পথে আর যাই না। ইস্কাটন গার্ডেন আসি হাতিরঝিল হয়ে।মাস তিন আগেও মালিবাগ-মৌচাক হয়ে অফিসে আসতাম।
রামপুরা হয়ে আসার দিনগুলোতে সারা পথ যেমন-তেমন মালিবাগের নির্মাণাধীন উড়ালসেতুর নিচে গিয়ে বাস থামতেই রাজ্যের আতঙ্ক ভর করত মাথায়। মনে হতো এই বুঝি একটা গার্ডার ‘দ্রিম’ করে পড়ল বাসের ছাদে। গেলাম বুঝি চিড়েচেপ্টা হয়ে। সারাটা পথ সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে করতে আসতে হতো। কারণ ছিল বটে। বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। দেখেই বোঝা যেত। খুব বেশি সতর্কতা চোখে পড়েনি কখনো।
এমন অহরহ হতো, উপরে উঠে ওয়েল্ডিং করছে নিচে বিন্দু বিন্দু গলে পড়ছে লোহার জ্বলন্ত কণা। আবার ক্রেনে করে গার্ডার তোলা হচ্ছে, নিচ দিয়ে চলছে গাড়ি। অথচ যেকোনো মুহূর্তে ওয়্যার (ক্রেনের তার) ছিঁড়ে পড়ার শঙ্কা থাকত।
দেশের নির্মাণ শ্রমিকরা বরাবরই অবহেলিত। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হয় না। নিরাপত্তা সরঞ্জামও ব্যবহার করেন না শ্রমিকরা। কখনো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অবহেলা। আবার কখনো শ্রমিকদের নিজেদের অবহেলা। সরঞ্জাম থাকার পরও ব্যবহার না করা।
একই অবস্থা উড়ালসেতুর নির্মাণ শ্রমিকদের বেলাতেও। তাদের নিরাপত্তার জন্যও খুব বেশি ব্যবস্থাপনা চোখে পড়েনি কখনো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওভারহেডে (উপরে ঝুলে) কাজ করে তারা। সেইফটি বেল্ট, সেইফটি বুট কোনোটাই পরনে দেখেনি। বয়সেও এরা অনেক ছোট। কিশোর-তরুণও আছে এদের মধ্যে। শরীর স্বাস্থ্যের বর্ণনা নাই বা দিলাম।
প্রায়ই বাসের জানালা গলিয়ে তাকিয়ে থাকতাম এদের দিকে। কীভাবে কাজ করছে দেখতাম। আর তখনই একটা দুর্ঘটনার ছবি চোখে ভাসত। মনে হতো এই বুঝি উপরে ঝুলে কাজ করা ছেলেটি আধপচা দড়ি ছিঁড়ে সামনে পড়ল। নয়ত মাথায় করে উঁচুতে তোলা লোহার বারটি হাত ফসকে পড়ছে পথচারীর মাথায়।
এ রকম অনেক দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতিনিয়তই কল্পনা হতো। কিন্তু কাকে বললে কাজ হবে? কে শুনবে এসব কথা? উপরে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হচ্ছে। নিচে হরদম মানুষ চলছে। গাড়ি চলছে। ব্যস্ত সড়কের ব্যস্ততা যেন আরও বেড়েছে। বাড়ছে।
ওই পথে যারা চলাফেরা করেন তাদের কাছে এসব নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিনিয়ত দেখছেন। প্রথম প্রথম দেখলে চিন্তা-ভাবনা মাথায় এলেও এখন তা চোখ সওয়া হয়ে গেছে অনেকের। আমরা মেনেই নিয়েছি এভাবেই হয় উন্নয়ন কাজ। এখানে বাড়তি সতর্কতা কিংবা নিরাপত্তার কী আছে। এসব নিয়ে চিন্তা করার মতো সময়ই বা কোথায় আমাদের?
তবে এবার বোধহয় সময় হবে। সাধারণ মানুষ চিন্তা করে তো কিছু করতে পারে না কখনো। তারা নিজের উপকার খুব একটা করতে পারে। করলেও খুব কম। ব্যক্তিগত পর্যায়ে। যারা একটু খেয়াল করলে সাধারণের ভোগান্তি কমে তাদের টনক কি একটু নড়বে এবার?
১২ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটা মানে ১৩ মার্চের প্রথমার্ধ্বে মালিবাগের রেলগেট এলাকায় নির্মাণাধীন উড়ালসেতুর গার্ডার পড়ে স্বপন নামে একজন মারা গেছেন। আর যে দুজন আহত হয়েছেন তাদের একজন প্রকৌশলী পলাশ। অন্যজন শাহ সিমেন্টের গাড়িচালক নূরনবী। রাতে ক্রেন ছিঁড়ে গার্ডারটি নিচে পড়েছিল। এই ঘটনা নতুন নয়। ২০১২ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের ঘটনা কি কেউ ভুলে গেছে?
নির্মাণাধীন সেতুর গার্ডার ভেঙে নিহত হয়েছিল অন্তত ১৫ জন। তারপরও কি উচিত ছিল না আমাদের সতর্ক হওয়ার? ভাগ্য ভালো বলতে হবে। রাত আড়াইটায় ঘটেছে মালিবাগের ঘটনা। ওই সময় পথে গাড়ি কম ছিল। পথচারীও ছিল হাতেগোনা। ঘটনাটি দিনেও ঘটতে পাড়ত। আর যদি তাই হতো তবে হতাহতের সংখ্যা বহদ্দারহাটকে ছাড়িয়ে যেত।
কারণ মালিবাগ রেলগেট এলাকার ব্যস্ততা চট্টগ্রাম নগরীর চেয়ে কম নয়, এটা সবাই জানে। লোকমুখে বলাবলি হচ্ছে, বহদ্দারহাটের পর মালিবাগ রেলগেট। এরপর? না।
আমরা চাই না দুর্ঘটনার তালিকা আর দীর্ঘ হোক। উন্নয়ন চলবে। ঝুঁকিও থাকবে। তাই সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হতে হবে আরও। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকের, জনসাধারণের। তা না হলে একের পর এক এসব দুর্ঘটনা জীবন কেড়ে নেবে, শেখাতে পারবে না কিছুই।
রামপুরা হয়ে আসার দিনগুলোতে সারা পথ যেমন-তেমন মালিবাগের নির্মাণাধীন উড়ালসেতুর নিচে গিয়ে বাস থামতেই রাজ্যের আতঙ্ক ভর করত মাথায়। মনে হতো এই বুঝি একটা গার্ডার ‘দ্রিম’ করে পড়ল বাসের ছাদে। গেলাম বুঝি চিড়েচেপ্টা হয়ে। সারাটা পথ সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে করতে আসতে হতো। কারণ ছিল বটে। বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। দেখেই বোঝা যেত। খুব বেশি সতর্কতা চোখে পড়েনি কখনো।
এমন অহরহ হতো, উপরে উঠে ওয়েল্ডিং করছে নিচে বিন্দু বিন্দু গলে পড়ছে লোহার জ্বলন্ত কণা। আবার ক্রেনে করে গার্ডার তোলা হচ্ছে, নিচ দিয়ে চলছে গাড়ি। অথচ যেকোনো মুহূর্তে ওয়্যার (ক্রেনের তার) ছিঁড়ে পড়ার শঙ্কা থাকত।
দেশের নির্মাণ শ্রমিকরা বরাবরই অবহেলিত। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন তা নেওয়া হয় না। নিরাপত্তা সরঞ্জামও ব্যবহার করেন না শ্রমিকরা। কখনো নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের অবহেলা। আবার কখনো শ্রমিকদের নিজেদের অবহেলা। সরঞ্জাম থাকার পরও ব্যবহার না করা।
একই অবস্থা উড়ালসেতুর নির্মাণ শ্রমিকদের বেলাতেও। তাদের নিরাপত্তার জন্যও খুব বেশি ব্যবস্থাপনা চোখে পড়েনি কখনো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওভারহেডে (উপরে ঝুলে) কাজ করে তারা। সেইফটি বেল্ট, সেইফটি বুট কোনোটাই পরনে দেখেনি। বয়সেও এরা অনেক ছোট। কিশোর-তরুণও আছে এদের মধ্যে। শরীর স্বাস্থ্যের বর্ণনা নাই বা দিলাম।
প্রায়ই বাসের জানালা গলিয়ে তাকিয়ে থাকতাম এদের দিকে। কীভাবে কাজ করছে দেখতাম। আর তখনই একটা দুর্ঘটনার ছবি চোখে ভাসত। মনে হতো এই বুঝি উপরে ঝুলে কাজ করা ছেলেটি আধপচা দড়ি ছিঁড়ে সামনে পড়ল। নয়ত মাথায় করে উঁচুতে তোলা লোহার বারটি হাত ফসকে পড়ছে পথচারীর মাথায়।
এ রকম অনেক দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতিনিয়তই কল্পনা হতো। কিন্তু কাকে বললে কাজ হবে? কে শুনবে এসব কথা? উপরে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হচ্ছে। নিচে হরদম মানুষ চলছে। গাড়ি চলছে। ব্যস্ত সড়কের ব্যস্ততা যেন আরও বেড়েছে। বাড়ছে।
ওই পথে যারা চলাফেরা করেন তাদের কাছে এসব নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিনিয়ত দেখছেন। প্রথম প্রথম দেখলে চিন্তা-ভাবনা মাথায় এলেও এখন তা চোখ সওয়া হয়ে গেছে অনেকের। আমরা মেনেই নিয়েছি এভাবেই হয় উন্নয়ন কাজ। এখানে বাড়তি সতর্কতা কিংবা নিরাপত্তার কী আছে। এসব নিয়ে চিন্তা করার মতো সময়ই বা কোথায় আমাদের?
তবে এবার বোধহয় সময় হবে। সাধারণ মানুষ চিন্তা করে তো কিছু করতে পারে না কখনো। তারা নিজের উপকার খুব একটা করতে পারে। করলেও খুব কম। ব্যক্তিগত পর্যায়ে। যারা একটু খেয়াল করলে সাধারণের ভোগান্তি কমে তাদের টনক কি একটু নড়বে এবার?
১২ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটা মানে ১৩ মার্চের প্রথমার্ধ্বে মালিবাগের রেলগেট এলাকায় নির্মাণাধীন উড়ালসেতুর গার্ডার পড়ে স্বপন নামে একজন মারা গেছেন। আর যে দুজন আহত হয়েছেন তাদের একজন প্রকৌশলী পলাশ। অন্যজন শাহ সিমেন্টের গাড়িচালক নূরনবী। রাতে ক্রেন ছিঁড়ে গার্ডারটি নিচে পড়েছিল। এই ঘটনা নতুন নয়। ২০১২ সালে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটের ঘটনা কি কেউ ভুলে গেছে?
নির্মাণাধীন সেতুর গার্ডার ভেঙে নিহত হয়েছিল অন্তত ১৫ জন। তারপরও কি উচিত ছিল না আমাদের সতর্ক হওয়ার? ভাগ্য ভালো বলতে হবে। রাত আড়াইটায় ঘটেছে মালিবাগের ঘটনা। ওই সময় পথে গাড়ি কম ছিল। পথচারীও ছিল হাতেগোনা। ঘটনাটি দিনেও ঘটতে পাড়ত। আর যদি তাই হতো তবে হতাহতের সংখ্যা বহদ্দারহাটকে ছাড়িয়ে যেত।
কারণ মালিবাগ রেলগেট এলাকার ব্যস্ততা চট্টগ্রাম নগরীর চেয়ে কম নয়, এটা সবাই জানে। লোকমুখে বলাবলি হচ্ছে, বহদ্দারহাটের পর মালিবাগ রেলগেট। এরপর? না।
আমরা চাই না দুর্ঘটনার তালিকা আর দীর্ঘ হোক। উন্নয়ন চলবে। ঝুঁকিও থাকবে। তাই সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হতে হবে আরও। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে শ্রমিকের, জনসাধারণের। তা না হলে একের পর এক এসব দুর্ঘটনা জীবন কেড়ে নেবে, শেখাতে পারবে না কিছুই।