প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনীতির প্রশংসা করে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রাজনীতিতে ভালো করতে হলে ভালো মানুষের কোনো বিকল্প নেই। দেশে এখন ভালো মানুষের অনেক অভাব। তবে এখনো কিছু ভালো মানুষ আছে বলেই দেশটা টিকে আছে। এর একটি জলজ্যান্ত প্রমাণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র কেন্দ্রে (টিএসসি) আয়োজিত সূর্যসেন হলের ৫০ বছর পূর্তি উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশ্বের প্রায় সব দেশেই নির্বাচনের দায়িত্বে থাকে ক্ষমতাসীন সরকার। শেখ হাসিনা যদি কোনো কারণে নির্বাচনে হেরেও যান তবুও তিনি জনমতকে প্রবাহিত করবেন না। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না, আমি হলফ করে বলতে পারি নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রাজনীতিতে সৌজন্যবোধ হারিয়ে গেছে। এখন কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েও ভাবতে হয় এখানে যে আসলাম এর জন্য দলের কোনো সমস্যা হবে কি না। এটা তো রাজনীতি নয়। দুর্ভাগ্য হলো এখন সর্বক্ষেত্রেই রাজনীতির প্রচলন শুরু হয়ে গেছে।’
সাংবাদিকদের মধ্যেও রাজনীতি ঢুকে গেছে উল্লেখ করে এক সময়ে সাংবাদিকতায় সক্রিয় এই রাজনীতিক বলেন, ‘আমাদের সময় প্রেসক্লাবে শুধু সাংবাদিকরা উঠাবসা করতেন। ছিল না কোনো রাজনীতি। আর সেখানে এখন রাজনীতি ঢুকে পড়েছে। বিভাজনও সৃষ্টি হয়েছে। সব জায়গায় এখন বিভক্তি।’
শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘শিক্ষকদের একটি আত্মমর্যাদাবোধ আছে। আপনার এখন আত্মমর্যাদাবোধ হারিয়ে ছাত্রনেতাদের তোষামোদ করছেন। তারা এখন কথায় কথায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিচ্ছে। এটা তো শিক্ষা বিকাশের জন্য অনেক ক্ষতিকর। আপনারা শিক্ষকরা একটু আপনাদের আত্মসম্মানের প্রতি নজর দিন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কালো টাকা। এটা একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ।’ তিনি বলেন, ‘এখন সন্ত্রাসবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। কয়েক দিনের ঘটনায় এটা একটি বড় প্রমাণ।’ বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনারা দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবেন না।’
নিজের ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা কোথাও গেলে বাস-ট্রেনে করে যেতাম। প্লেনে যাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। আর এখনকার নেতাকর্মীরা ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোতে গেলেও প্লেনে করে যায়।’
কাদের বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিলবোর্ডের রাজনীতি বেড়ে গেছে। আমি দেখেছি কোনো কোনো বিলবোর্ডে ৭০ থেকে ৮০ জনের ছবি। তাদের সবাই নেতা, কোনো কর্মী নেই।’ তিনি বলেন, ‘এখন আর কেউ কর্মী হতে চায় না। সবাই নেতা হতে চায়।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমরা আজ সবাই একত্রে মিলিত হয়েছি এই উৎসবে। অন্য সময় তো কাউকেই পাওয়া যায় না। সবাই থাকে ব্যস্ত। এরকম অনুষ্ঠান আমাদের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আমরা এখন এত ব্যস্ত থাকি যে পরিবারকেও সময় দিতে পারি না। আমার নিজেরও ভালো লাগছে আপনাদের সবাইকে এভাবে কাছে পেয়ে।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সূর্যসেন হলের প্রভোস্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।