প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে আবারও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠানা ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ এনেছেন । তিনি বলেন এই ‘ষড়যন্ত্র করায়’ দেশবাসী ইউনূসের ‘বিচার করবে।
জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি জানান, দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে তার পরিবারের সদস্যদেরকেও হেনস্থার চেষ্টা করা হয়েছে।
২০১০ সালে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এই প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলে বিশ্বব্যাংক। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে টানাপড়েনের পর ২০১২ সালের ৩০ জুন এক বিবৃতিতে এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানটি। পরে সরে দাঁড়ায় আইডিবি, এডিবি এবং জাইকাও।
দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ আওয়ামী লীগের জন্য ছিল বড় ধাক্কা স্বরূপ। এই অভিযোগ অস্বীকার করে নিজ অর্থায়নে সেতুর কাজ শুরুও করে দেয় সরকার। আর সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ নিয়ে কানাডা আদালতে রায় প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হন সরকারের মন্ত্রীরা। ওই রায়ে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ তুলেছে সেটা ছিল গালগপ্প আর গুজব।
কানাডা আদালতের রায় প্রকাশের পর জাতীয় সংসদে বিষয়টি নিয়ে তোলপার হয়েছে। বিশ্বব্যাংক আর এই দুর্নীতির অভিযোগ তোলা ব্যক্তিদের সংসদে তলব করার দাবি উঠেছে। সে সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সংসদকে জানান, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ইউনুসকে অপসারণের সিদ্ধান্ত বদলে না দিলে পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে সমস্যা হবে বলে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।
২০১১ সালে বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ইউনূস এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে গেলে আদালত সরকারের পক্ষেই রায় দেয়।
প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘শুধু এটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য একটা দেশের এতবড় সর্বনাশ যে করতে পারে… আমি জানি না, সে বিচার দেশবাসী করবে।’
কানাডা আদালতের রায় প্রকাশের পর ইউনূসের পক্ষে প্রচার চালানো সংগঠন ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, পদ্মাসেতুতে অর্থায়ন বাতিল নিয়ে ইউনূসের কোনো সম্পৃক্ততা কখনও ছিল না।
তবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ব্যাংকের এমডির পদ, সেই এমডির বয়স হয়ে গেছে, পদে থাকতে পারবে না। সেইটা নিয়ে কতবড় একটা ষড়যন্ত্র করল।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাংক টাকা বন্ধ করে দিল মিথ্যা একটা অভিযোগ দিয়ে। সেখানে নাকি দুর্নীতি হয়েছে। আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘তারা অনেক প্রলোভন দিয়েছিল… এটা করলে টাকা দেবে, ওটা করলে টাকা দেবে। তখন বললাম, ওই মিথ্যা অপবাদ মাথায় নিয়ে ওই টাকা নেব না। যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা প্রমাণ করতে না পারবা। সেটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল, সেখানে আমরা জয়ী হয়েছি।’
পদ্মা সেতু নিয়ে কানাডার আদালতের সাম্প্রতিক রায়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের সব অভিযোগ যে ‘ভুয়া, বানোয়াট’ তা ওই রায়েই প্রমাণ হয়েছে।