প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে উন্নয়ন হলেও গণতন্ত্র সীমিত বলে উঠা অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, গণতন্ত্র আছে বলেই দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ সরকার গত আট বছরে যে উন্নয়ন করেছে, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সরকার সেটা ২১ বছরেও করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তার দীর্ঘ ভাষণে বর্তমান সরকারের আমলে নেয়া নানা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা শেষ হলো। আর এই বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর ভোট হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশই যদি না থাকে, কথা বলার স্বাধীনতা না থাকে, তাহলে এত কথা তারা বলেন কীভাবে, সরকারের এত সমালোচনা করেন কীভাবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে কোনো বেসরকারি টেলিভিশন ছিল না। একমাত্র বিটিভি ছিল আর রেডিও ছিল। আমি শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান হিসেবে আমি প্রথম বেসরকাটি খাতে টেলিভিশন উন্মুক্ত করে দেই, বিভিন্ন চ্যানেল দিয়ে দেই। আমি চ্যানেল দিয়েছি বলে কথা বলারও সুযোগ পাচ্ছেন, আর সমালোচনারও সুযোগ পাচ্ছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা আছে, সেই জন্যই দেশের উন্নতি হচ্ছে। আজকে আমাদের মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া হোক আর ইলেকট্রনিক মিডিয়া হোক, পত্রপত্রিকায় তারা ইচ্ছামত সমালোচনা করতে পারে, লিখতে পারেন বলেই তারা এত কথা বলতে পারছেন।’
সরকারের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পূর্বে ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, কই তখন উন্নয়ন হয়নি কেন। আমরা আট বছরে যেটা করতে পারলাম, অতীতে যারা ছিল তারা সেটা পারেনি কেন? এটা আমার প্রশ্ন, সেই প্রশ্নের জবাব তাদের দিতে হবে যারা সমালোচনা করেন।’
বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি সরকারের নানা পরিকল্পনার বর্ণনা দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, শুধু উন্নয়ন করলেই হবে না, গণতন্ত্র লাগবে। কাদের মুখে শুনি? সেই লোকগুলো, নাম বলতে চাই না, যখন ইমার্জেন্সি সরকার অথবা মিলিটারি ডিক্টেটর আসে, তখন তাদের কাছে মার্শাল ল বা মিলিটারি ডিক্টেটর খুব গণতান্ত্রিক মনে হয়, বিগলিত প্রাণ হয়ে তাদের পদলেহন শুরু করে। তখন গণতন্ত্র ঠিক থাকে।’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন আমাদের গ্রেপ্তার করা হলো, তখন আমাকে দুর্নীতিবাজ বানিয়ে জেল খাটাতে চায় কি না সেই চেষ্টা করে তখন তারা এত গণতন্ত্র চারদিকে দেখলো। তখন দেশে এমার্জেন্সি, সারা বাংলাদেশে মিলিটারি ডেপ্লয় করা, তখন ওনাদের কাছে এটা খুব গণতান্ত্রিক পরিবেশ। কারণ, তারা ভাবলেন অস্বাভাবিক পাওয়ার যদি পাওয়া যায়, তাহলে ওনাদের একটু গুরুত্ব বাড়তে পারে, একটা মন্ত্রিত্ব বা পতাকা পেতে পারেন, এটাই ওনাদের আকাঙ্ক্ষা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আকাঙ্ক্ষা যদি এটাই হয় যে রাজনীতি করবে, তাহলে ভোটে গেলেই হয়, নির্বাচন করবে, জনগণের কাছে যাবে, ভোটে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে আসবে। সেখানে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলদারদের সাথে খাতির, তারা থাকলে গণতন্ত্র।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, প্রতিটি কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করি। আর যা কিছু করি জনগণের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা চিন্তা করে না, নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য করি না।… ওই পতাকা পেলাম কি পেলাম না, ওটা নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। ওটা যদি হতো তাহলে ২০০১ সালে যখন বলা হলো আমাকে গ্যাস বিক্রি করতে হবে, গ্যাস বাংলাদেশের, বিক্রি করবে আমেরিকার কোম্পানি, কিনবে ভারত, আমি রাজি হইনি। আমার দেশে যদি গ্যাস পাওয়া যায়, তাহলে সেই গ্যাস আগে ব্যবহার করবে আমার দেশের মানুষ, আমার ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকবে। উদ্বৃত্ত হলে আমি বিক্রি করবো, তা নইলে বিক্রি করবো না। এই কথা বলার কারণে তো ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আর যারা গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল তারাই ক্ষমতায় এসেছিল। আর আমি বলেছিলাম, ওই গ্যাস আমরা পাবে না, দিতেও পারবো না। সেই গ্যাস পায়নি, দিতেও পারেনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এত উন্নয়ন করার পর যারা তৃপ্তি পান না, তারা কী চায় এ দেশে? দেশ দরিদ্র থাকবে আর দরিদ্র, হাড্ডিস্বার, কঙ্কালস্বার মানুষগুলোকে দেখিয়ে দেখিয়ে পয়সা এনে এনে নিজেরা খেয়ে নিজেদের ওপর পূর্তি করতে থাকবে। আর গরিবরা গরিবই থাকবে, তাদের এই ব্যবসাটা আস্তে এস্ত সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কাজ পাচ্ছে, গ্রামের মানুষ উন্নত হচ্ছে, আজকে মানুষ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছে। এখানেই মনে হয় তাদের আপত্তি।’