প্রযুক্তির সহায়তায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মায়েরা বিদেশে অবস্থানরত প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাববিনিময় করতে পারছেন। আমরা সবাই প্রযুক্তির ভালো দিকের সঙ্গেই অধিক পরিচিত। ইন্টারনেট দেশ ও দেশের সীমানা পেরিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ ঘটায়। কিন্তু এর কিছু মন্দ দিকও রয়েছে; যেমন— ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, জাতীয় নিরাপত্তার ইস্যু এবং ব্যাংক জালিয়াতির মতো ঘটনা ঘটছে। সাইবার অপরাধের কারণে জনসাধারণ বিভিন্ন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ডিজিটাল বাংলাদেশ: প্রেক্ষিত সাইবার ক্রাইম, নিরাপদ ইন্টারনেট এবং ব্রাডব্যান্ড শীর্ষক দুই দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করেছে কমনওয়েলথ টেলিকমিউনিকেশন্স অর্গানাইজেশন (সিটিও) ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এমপি, কমনওয়েলথ টেলিকমিউনিকেশন্স অর্গানাইজেশনের (সিটিও) সেক্রেটারি জেনারেল শোলা টেইলর এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার।
ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ইন্টারনেট নিরাপদ না থাকলে অনলাইনে রাখা আমাদের সব তথ্য অনিরাপদ হয়ে পড়বে। কারণ প্রতিনিয়ত হ্যাকাররা অনলাইনে হুমকি দিচ্ছে। তবে আমাদের সরকার এসব হুমকি সম্পর্কে সচেতন। এরই মধ্যে সাইবার নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।
স্পিকার বলেন, সরকার সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন হালনাগাদ করেছে। সংসদ সদস্যরা সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ ও নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে আইসিটি বিশেষজ্ঞ ও আইন প্রণয়নকারী সংস্থার জনবলকে সক্ষম করে তুলতে প্রশিক্ষণের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
তারানা হালিম বলেন, ‘আমরা সাইবার জগেক নিরাপদ রাখতে অনেক পদক্ষেপ এরই মধ্যে গ্রহণ করেছি। বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের ফলে আমরা সহজেই সাইবার অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারছি। আমরা যদি সাইবার অপরাধীদের চেয়ে অগ্রসর থাকতে পারি, তবে এসব অপরাধ দমন করা সম্ভব।’
তারানা হালিম বলেন, ‘ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো দিন দিন অনিরাপদ হয়ে উঠছে। কিছু মানুষের অজ্ঞতা ও অপব্যবহারের ফলেই এটা হচ্ছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো তাদের নিজস্ব নীতিমালা ও আইন মেনে চলে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি, বাংলাদেশে যেন তারা এ দেশের আইন, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি মেনে চলে। এসব বিষয়ে তাদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’
সিটিও মহাসচিব শোলা টেইলর বলেন, ‘সাইবার অপরাধ কোনো জাতির একার সমস্যা নয়, এটা বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এ সমস্যা বৈশ্বিকভাবেই আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। সাইবার অপরাধ দমনে বাংলাদেশের বিভিন্ন পদক্ষেপের ও অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। দুদিনের এ সম্মেলনে আটটি কারিগরি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। আজ শেষ হবে দুদিনের এ কর্মশালা। শেষ দিনে তরুণদের নিয়ে নিরাপদ ইন্টারনেট, সাইবার স্পেস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তারানা হালিম সাংবাদিকদের বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ফেসবুক ও গুগলের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাড়া দিচ্ছে ফেসবুক। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও উসকানিমূলক পেজ তারা বন্ধ করেছে। কনটেন্ট সম্পর্কে বুঝতে ফেসবুকের অনুবাদক রয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই ভুয়া আইডির মাধ্যমে এসব কার্যক্রম পরিচালনা করায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এসব সমস্যা সমাধানে চলতি মাসেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে বলে জানান তিনি।