উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে গতকাল।রক্তাক্ত সিলেটের ওসমানীনগর। এসময় প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছে মাদরাসা ছাত্র সাইফুল ইসলাম। উভয়পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে ২৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় উত্তাল ওসমানীনগরের তাজপুর, কদমতলী, বেগমপুর, চাতলপাড়, কালনীরচর এলাকা। ঘটনার প্রতিবাদে দফায় দফায় সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। এতে দুই দফা সাড়ে ৩ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। এলাকাবাসী জানান, ওসমানীনগর ও জগন্নাথপুর উপজেলার সংযোগস্থল বাংলাবাজার। সাদিপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী ওই এলাকায় রয়েছে বেশি ভোটার। শনিবার বিকালে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জগলু চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কবির উদ্দিন, সাবেক মেম্বার আরজু মিয়া ও তার ভাই বাহার মিয়াসহ তাদের অনুসারীরা ওই এলাকায় গণসংযোগে যান। এ সময় একটি চায়ের দোকানে বসে থাকা পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার উত্তর কালনীরচর গ্রামের আল-আমিনসহ কয়েক যুবককে কবির চেয়ারম্যানের সঙ্গে থেকে জগলু চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার জন্য বলেন বাহার মিয়া। যুবকরা নিজেদের অন্য উপজেলার লোক উল্লেখ করে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে উভয় পক্ষে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই যুবকদের আটকে রেখে মারধর করেন বাহার ও তার লোকজন। এ নিয়ে শনিবার বিকালেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিক এলাকার গণ্যমান্য লোকজন এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তারা বিষয়টি সালিশি বৈঠকে শেষ করে দেয়ার কথা বলে আপাতত বিষয়টি মীমাংসা করেন। এলাকার লোকজন জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ৯টার দিকে ওসমানীনগরের দক্ষিণ কালনীরচরের আরজু মেম্বার ও বাহার মিয়াসহ তাদের পক্ষের লোকজন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলার উত্তর কালনীরচরে গিয়ে আল-আমীনের পক্ষের লোকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় আলামিনের পক্ষের লোকজন এগিয়ে এলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয়পক্ষে অন্তত ৫০ রাউন্ড গুলিবিনিময় হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এর মধ্যে গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় মাদরাসা ছাত্র সাইফুল ইসলাম। নিহত সাইফুল ইসলাম সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার উত্তর কালনীরচর গ্রামের মৃত শরফ উদ্দীনের ছেলে। সে একটি এতিমখানায় থাকতো। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সাইফুল সংঘর্ষে ছিল না। মাত্র ১৬ বছরের ওই কিশোর সংঘর্ষের অদূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ঘটনায় গুলিবিদ্ধসহ ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে ফুল মিয়া, আদিল আহমদ, আবুল হোসেন, আবদুল হক, আবদুর রউফ, জাহিদ, আতাউর, শরিফ মিয়া, সোহেল, আবদুস ছুবহান, তরিক, চেরাগ আলী, আল-আমিন সহ দুই পক্ষের শতাধিক লোক আহত হয়। গুরুতর আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২৩ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এদিকে পৌনে বারোটার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সাইফুলের লাশ নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় তারা বিক্ষোভ করে। দুইটার দিকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে তারা। এর আগে নেতাকর্মীরা জড়িতদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে বেগমপুর, কালনীবাজার এলাকায়ও বিক্ষোভ মিছিল করে। প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধকালে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ায় চরম দুর্ভোগ পোহায় যাত্রী সাধারণ। ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কবির উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নৌকার কর্মী এবং আমার নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলামকে খুন করা হয়েছে। আমি এ খুনের বিচার চাই। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আখতারুজ্জামান জগলু চৌধুরী বলেন, এটা কোনো নির্বাচনী সহিংসতা নয়। নিহত ব্যক্তির বাড়ি জগন্নাথপুর থানায়। আমার ঘোড়া প্রতীকের বিজয় দেখে নৌকার প্রার্থী ও সমর্থক খুনের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ওসমানীনগর থানার ওসি আবদুল আউয়াল চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। নিহত সাইফুলের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে তিন ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হচ্ছে কৃষ্ণমণি, আখলিস মেম্বার ও সোনা মিয়া। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী এবার ওসমানীনগর উপজেলা থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই তার পক্ষে সরব রয়েছেন কবিরউদ্দিন আহমদ। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কবির উদ্দিন আহমদ নিজেও এবার দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের শেষ দিন রাতে তিনি তার মনোনয়নপত্র মৌখিকভাবে প্রত্যাহার করে নেন। এর ফলে সিলেট আওয়ামী লীগের তরফ থেকে কেন্দ্রের কাছে আতাউর রহমান ও জগলু চৌধুরীর নাম পাঠানো হয়। এর মধ্যে জগলু চৌধুরীকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। ওসমানীনগরের ৮ ইউনিয়নের বাসিন্দাদের স্বপ্নের নির্বাচন এটি। কারণ অনেক দাবি, অনেক আন্দোলনের ফলে বর্তমান সরকারের তরফ থেকে ওসমানীনগর থানাকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়। আর উপজেলা ঘোষণার পর এবারই প্রথম নির্বাচন হচ্ছে। আর প্রথম নির্বাচনেই রক্তাক্ত হলো ওসমানীনগরের মাটি।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | ||||||
2 | 3 | 4 | 5 | 6 | 7 | 8 |
9 | 10 | 11 | 12 | 13 | 14 | 15 |
16 | 17 | 18 | 19 | 20 | 21 | 22 |
23 | 24 | 25 | 26 | 27 | 28 | 29 |
30 | 31 |