বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মহানগরীর আবাসিক এলাকাগুলো থেকে সরছে না । হলি আর্টিজান হামলার পর চট্টগ্রামের আবাসিক এলাকাগুলো থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে চিঠি দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
ফলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক গত বছর ২৯ আগষ্ট থেকে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করে নগরীর সবকটি আবাসিক এলাকায়। চউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খিন ওয়ান নু এ অভিযান পরিচালনা করেন।
এতে আবসিক এলাকার সড়কে সড়কে দোকানপাট, ভবনে ভবনে বিউটি পার্লার, কেজি স্কুল, ওষুধ কোম্পানীর বিপণন কার্যালয়, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা কেন্দ্র, হোটেল এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়সহ সবরকম বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে তিন মাস সময় দেয়া হয়। যা শেষ হয় গত বছর ৩১ ডিসেম্বর।
কিন্তু আবাসিক এলাকা থেকে এখনো সরেনি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও। বরং প্রচার চলছে চউক কর্তৃপক্ষকে লাখ-লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে ঠেকানো হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। অথচ অভিযানে খুশিই হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। স্বস্তি অনুভব করেছিলেন সচেতন মহল। যাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে এখন।
তবে চউক চেয়ারম্যান মো. আবদুচ ছালাম এ প্রসঙ্গে বলেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেঁধে দেওয়া সময় প্রায় শেষ হয়ে গেলেও ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় আপাতত অভিযান বন্ধ রয়েছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট আসবেন। অভিযান শুরু করা হবে।
আবাসিক এলাকা থেকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের কথা বলছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানও। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠি তারাও পেয়েছেন।
চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক, আবাসিক এলাকায় গড়ে ওঠা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করছে না সিটি করপোরেশন। নতুন কোনো লাইসেন্সও ইস্যু করছে না। প্রায় দেড়শ প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে আবাসিক এলাকায় ব্যবসা করছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় সকল বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করবে সিটি করপোরেশন। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে উচ্ছেদে ওয়াসা, গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ইত্যাদি সেবা প্রদানও বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট মালিককে স্ব-উদ্যোগে প্রতিষ্ঠান অপসারণে ছয় মাসের সময় এবং পরবর্তী এক মাসের মধ্যে তা উচ্ছেদ করার নির্দেশ রয়েছে।
চসিকের জরীপ থেকে জানা যায়, নগরীর ২৭ আবাসিকের এক হাজার ৭৩০ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র দেড়শ প্রতিষ্ঠানের কাছে সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স রয়েছে। বাকীসবগুলো অবৈধ। এরমধ্যে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, গেস্ট হাউস রয়েছে ৮৩৯টি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক বি-বøকে প্রায় প্রতিটি সড়কেই গড়ে উঠেছে দোকানপাট। ১২ নম্বর সড়কে ১৭টি দোকান নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিপণিবিতান। পুরো আবাসিকে ১৫ থেকে ১৬টি বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। শুধু ১৪ নম্বর সড়কেই রয়েছে পরপর চারটি বেসরকারি বিদ্যালয়।
এ-বøকের ৩ নম্বর সড়কে রয়েছে ১৫টি দোকান, পুরো বøকে রয়েছে ৬টি কেজি স্কুল, একটি নুরানী মাদ্রাসা, রয়েছে বেসরকারি সংস্থা, ব্র্যাক, প্রশিকা, ইপসাসহ ১২টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়। এ ছাড়া বিউটি পারলারও রয়েছে বিভিন্ন সড়কে। একইভবে পাঁচলাইশ আবাসিকে রয়েছে দুটি কমিউনিটি সেন্টার, পাঁচটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র ও হাসপাতাল এবং একটি ব্যাংকের শাখা। রয়েছে দোকানপাটও।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চান্দগাঁও আবাসিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু বকর চৌধুরী বলেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় আবাসিক এলাকায় বাইরের লোকজনের আনাগোনা বেড়েছে। ফলে বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন।
পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সাধারণ স¤পাদক আবু সৈয়দ বলেন, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নিতে ভ্রাম্যমান আদালত গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিলেও সরানো হয়নি একটি প্রতিষ্ঠানও। বরং এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন, চউক কর্তৃপক্ষকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে উচ্ছেদ থেকে রক্ষা পেয়েছেন তারা।