তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি এও বলেছেন, এসব সম্প্রচারের জন্য পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই বাংলাদেশের ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি না সে বিষয়ে গবেষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন ।
রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নিয়মিত আয়োজন ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম, সাংবাদিকদের সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলোর আধেয় নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
এক সংবাদিক বলেন, ভারতীয় চ্যানেল দেখে পরিবারে কলহ ও তালাক বেড়ে যাওয়ার দাবি করেছেন একজন গবেষক। সরকার এ বিষয়ে কী ভাবছে তা জানতে চান তিনি।
জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয় চ্যানেলসহ অন্য দেশীয় চ্যানেল এখানে দেখা হচ্ছে, এনিয়ে গবেষণা হচ্ছে। ভারতীয় চ্যানেল দেখার পরে পরিবারে বিশৃঙ্খলা বেড়েছে, তালাক বেড়েছে- এ রকম কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে নাই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয় চ্যানেল একশ কোটির বেশি লোক দেখে। ভারতে খোঁজ করব এসব চ্যানেল দেখার পরে সেখানে তাদের পারিবারিক কলহ দেখা দিচ্ছে কি না।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। বোর্ডের প্রধান হিসেবে একজন বিচারপতির নাম চাওয়া হয়েছে আইনমন্ত্রীর কাছে। এতদিন পর্যন্ত পত্রিকার সাংবাদিকরা এই সুবিধা পেলেও এখন থেকে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমও ওয়েজবোর্ডের অন্তর্ভুক্ত হবে বলে জানান ইনু।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী জানান, সম্প্রচার আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। এটি পাসের জন্য সংসদের আগামী অধিবেশনে তোলা হবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা গণমাধ্যমের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণ হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে, সাংবাদিককূলের বেশিরভাগই কাজ করছেন। দুই একজন এই আইনের আওতায় পড়েছেন। ২৮০০ এর বেশি পত্র-পত্রিকা আছে, সেখানে কত হাজার সাংবাদিক কাজ করছেন? যদি পরিমাণটা দেখেন, তাহলে এই আইন নিয়ে আপনারা তো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত না।’
সম্প্রচার এবং সাইবার অপরাধ দমন নামে দুটি আইন করা হচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাইবার অপরাধ দমন আইনটা যুগের চাহিদা এটা করবই আমরা। এটা করতে হবে এজন্য গণমাধ্যম এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুরো বাংলাদেশকে স্বচ্ছ কাচের ঘরে পরিণত করছে। সেখানে সব কিছু দেখা যায়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এই কাচের ঘরে রাষ্ট্র থাকে, নারী, শিশু, অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি জীবনের গোপনীয়তা। সুতরাং এই কাচের ঘর আমি বন্ধ করব না। সব জায়গায় আলো ফেলেন, কাচের ঘর তৈরি করেন।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, মিথ্যা তথ্য পরিবেশনের দায়ে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।তিনি বলেন, ‘আমার দেশ বন্ধ করা হয়নি, অনলাইনে চলছে। প্রকাশনা আইনগত জটিলতা আছে। আমার দেশ কর্তৃপক্ষকে বলেছি আইনগত জটিলতা ডিসির অফিস থেকে ঠিক করে নেন। তারা এটাকে না ঠিক করে এটা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করছে।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভির কার্যক্রম এখনও স্থগিতই আছে। এগুলো আমাদের পর্যালোচনায় আছে, তবে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত বা সুখবর আপনাদের দিতে পারছি না।’
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যা মামলা নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। বলেন, ‘সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনগত নিষ্পত্তি না করতে পারাটা এটা আমাদের ব্যর্থতা। কিন্তু ব্যর্থতা কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। যেহেতু ব্যর্থতা স্বীকার করছি সুতরাং ব্যর্থতা কাটিয়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে এর বেশি মন্তব্য করার সুযোগ আমার পক্ষ থেকে নাই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আমরা যৌথভাবে ব্যর্থতা কাটিয়ে তোলার সর্বত্মক চেষ্টা করছি।’
ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী বক্তব্য দেন।