সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এখন প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য বেঞ্চ ঠিক করে দেবেন।পুরান ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় আট ছাত্রলীগ নেতার ফাঁসির দণ্ডের ওপর ডেথ রেফারেন্সের শুনানির জন্য পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিচারিক আদালতে কারও মৃত্যুদণ্ড হলে কেউ আপিল না করলেও হাইকোর্টে এ নিয়ে শুনানি হয়। এটি ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার ঢাকাটাইমসকে বলেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে।
তবে এই রায় কার্যকর এখনও বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে। আর সেটি এখনও সময়সাপেক্ষও বটে। আইন অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স শুনানির পর হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে আসামিরা আপিল করতে পারবে। সেখানেও দণ্ড বহাল থাকলে আসামিপক্ষ রিভিউয়ের সুযোগ পাবে। রিভিউয়ে দণ্ড বহাল থাকলে এরপর আবার রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন আসামিরা। রাষ্ট্রপতি নাচক করলেই দণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রকাশ্যে। বেসরকারি টেলিভিশনের ক্যামেরায় এই হত্যার দৃশ্য ধারণ করা হয় এবং তা প্রচারও করা হয় গণমাধ্যমে।
পরদিন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। এরপর সাত আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) স্থানান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। ওই বছরের ২৬ মে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। মামলাটিতে রাষ্ট্রপক্ষ বিশ্বজিতের বাবাসহ ৩৩ জনকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করে।
২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক এ বি এম নিজামুল হক রায় ঘোষণা করেন। তিনি আটজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দণ্ড পাওয়া সবাই আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জগনাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মী।
২১ আসামির মধ্যে কারাগারে আছেন আট জন। বাকিদেরকে চার বছর পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামি হলেন- রফিকুল ইসলাম ওরফে শাকিল, মাহফুজুর রহমান ওরফে নাহিদ, জি এম রাশেদুজ্জামান ওরফে শাওন, কাইয়ুম মিয়া, ইমদাদুল হক ওরফে এমদাদ, সাইফুল ইসলাম, রাজন তালুকদার ও নূরে আলম ওরফে লিমন। এদের মধ্যে রাজন তালুকদার ও নূরে আলম এখনো পলাতক রয়েছেন। বাকি ছয়জন কারাগারে আছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ জন হলেন- এ এইচ এম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা, খন্দকার ইউনুস আলী, তারেক বিন জোহর, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশাররফ হোসেন। এদের মধ্যে এস এম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা ছাড়া বাকিরা পলাতক।
জগন্নাথের ব্যবস্থা
বিশ্বজিৎ হত্যার কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘটনার সন্দেহভাজন ১০ জনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও তিনজনের সনদ বাতিল করে। বহিষ্কৃতরা হলেন- কাইয়ুম, রাজন, সাইফুল, শাওন, শাকিল, নুর আলম, ওবায়দুল, মশিউর রহমান, মামুন ও তাহসিন। আর সনদ বাতিল হয়েছে মাহফুজুর রহমান, ইমদাদুল ও কিবরিয়ার।