সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্বব্যাংকের কারণে অমানবিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী । তিনি বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল ও মিডিয়ার কারণে আমাকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কতিপয় পত্রিকা অসত্য সিরিজ লেখা হয়েছে। কার্টুন ও সম্পাদকীয় প্রকাশ করা হয়েছে। আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, কানাডায় আমার জামাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টসহ আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের ব্যাংক হিসাব তদন্ত করা হয়েছে। গ্লোবাল সার্সে গিয়ে গ্লোবালি ইনকোয়ারি করেছে। আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আমাকে কী পরিমাণ অমানবিক মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক এর বিস্তারিত বর্ণনা দিতে চাই না। কারণ বিশ্বব্যাংকের এই অমানবিক যন্ত্রণার কথা বলতে গেলে আমার নিজেরও লজ্জা লাগে। কারণ এই ব্যাংকের আমরাও সদস্য। আজ এই ব্যাংকের সুনাম নষ্ট হয়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদের ইন্টিগ্রিটি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।

রবিবার সকালে সৈয়দ আবুল হোসেন বিদেশ থেকে ফিরে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকাটাইমসকে এসব কথা বলেন।

২০১০ সালে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক। সরকার নাকচ করলেও তিন বছরের টানাপড়েনের পর ২০১২ সালের ৩০ জুন ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি বাতিল করে সরকার। এরপর এই প্রকল্প থেকে সরে যায় জাইকা, এডিবি ও আইডিবি। এরপর সরকার নিজ অর্থায়নে সেতুর কাজ শুরু করে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের এই টালবাহানার কারণে সেতুর কাজ পিছিয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। ২০১২ সালের শেষ দিকে সেতু চালুর প্রাথমিক পরিকল্পনা থাকলেও এখন সেটা নির্ধারণ হয়েছে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। আর এই বিলম্বের কারণে সেতুর নির্মাণ ব্যয়ও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

আবার বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের কারণে বাংলাদেশ সরকার, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সচিব মোশাররফ হোসেনকে হেনস্থা হতে হয়েছে। তবে সম্প্রতি কানাডার একটি আদালত তার রায়ে বলেছে, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল গালগপ্প। গুজবের ওপর ভিত্তি করে এই মামলা করা হয়েছে। আর যাদের কথার ওপর ভিত্তি করে মামলা হয়েছে তাদের একটি পক্ষ নিজেই দুর্নীতিবাজ এবং তারা কাজ না পেয়ে অভিযোগ তুলেছিল।

সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাংক প্রথমে বললো- পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। পরে বললো দুর্নীতির ষড়যন্ত্র হয়েছে। এরপর বললো- দুর্নীতির অভিপ্রায় হয়েছে। শেষাবদী কানাডার আদালতে প্রমাণ হলো- দুর্নীতির কিছুই হয়নি। সব গালগল্প, বোগাস। তিনি বলেন, আজ প্রমাণিত যে পদ্মা সেতু আন্তর্জাতিক দেশীয় ষড়যন্ত্রের শিকার। একটি স্বার্থান্বেষী মহলের অভিযোগ, দেশের কতিপয় পত্রিকা আমার বিরুদ্ধে অসত্য রিপোর্ট এবং সর্বোপরি বিশ্বব্যাংকের যেসব অভিযোগ আমলে নিয়ে আমাকে সরাসরি বিতর্কিত করে। উদ্দেশ্য আমাকে মেলাইন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। সরকারকে ফেলে দেয়া। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শ নেতৃত্ব দেশকে রক্ষা করেছে। পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতার পথে।

সাবেক এ যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর অনেকে প্রবন্ধ লিখে, টকশো’তে কথা বলেছে এবং অনেক সাংবাদিক আমার প্রতি মিডিয়ার অন্যান্য আচরনে লজ্জিত হয়েছেন। অনুতপ্তবোধ করেছেন। এজন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ।

আবুল হোসেন বলেন, আমি সারাজীবন সততা ও ন্যায়ের পথে থেকে ব্যবসা করেছি। অর্থ উপার্জন করেছি। সরকারকে ট্যাক্স দিয়েছি- দিচ্ছি। আমার পুরো জীবন স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। রাজনীতি ও মন্ত্রিত্বকে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করিনি। পত্রিকার অসত্য রিপোর্ট ও পদ্মা সেতুর নেতিবাচক উপাখ্যান আমার ব্যক্তিগত সততা ও ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আজ সত্য মিথ্যা আপনাদের সামনে। বিশ্বব্যাংকসহ সবাই আজ অনুতপ্ত। সবাই তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ও স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে পদ্মা সেতুর কাজ বিলম্বিত হওয়ায় বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। পদ্মা সেতুর প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেল। বাংলাদেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হলো।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031