মসজিদ প্রাঙ্গণে রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে নিষেধ করা হয়েছে কলকাতার প্রখ্যাত টিপু সুলতান মসজিদের শাহী ইমামকে । একই সঙ্গে তাকে বলা হয়েছে, তিনি যেন ধর্মের সঙ্গে রাজনীতিকে না মিশিয়ে ফেলেন।
ওই শাহী ইমাম, নুরুর রহমান বরকতি নিয়মিতই রাজনৈতিক বার্তা দিয়ে থাকেন, যার বেশীরভাগই হিন্দু সংগঠন আরএসএস – বিজেপি বিরোধী। তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ লোক বলে গণ্য করা হয়।
টিপু সুলতান মসজিদে মোতোয়াল্লি, আনোয়ার আলি শাহ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “আমরা উনাকে জানিয়েছি, যে মসজদিটা ধর্মীয় স্থান। সেখানে রাজনীতি আনবেন না। ইমামতির জায়গায় সেটাই করুন। আর রাজনীতির কথা নিশ্চয়ই তাঁর বলার অধিকার আছে, সেটা তিনি বাইরে বলুন, মসজিদে নয়। উনি বার বার মসজিদ চত্বর থেকে রাজনৈতিক কথা বললে সমাজের মধ্যে একটা ভুল বার্তা যাচ্ছে, যে উনি মসজিদে বসে যা বলছেন, সেটা সমস্ত মুসলমানদের কথা। কিন্তু তা তো নয়।”
মসজিদের চত্বরকে যাতে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্য ব্যবহার না করা হয়, তার জন্য সেখানে পোস্টার এবং ব্যানার লাগিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। দিন কয়েক আগে এ নিয়ে মসজিদ লাগোয়া দোকানগুলিতে ১২ ঘণ্টার একটা ধর্মঘটও পালন করা হয়েছে।
মি. শাহ আরও জানাচ্ছিলেন যে শাহী ইমামকে অনেকবার অনুরোধ করা হয়েছে যাতে তিনি মসজিদ থেকে রাজনৈতিক কথা না বলেন। কিন্তু উনি সেটাই চালিয়ে যাচ্ছেন, এর আগে কেউ কোনও প্রতিবাদও করেন নি! কিন্তু শাহী ইমামের নিয়মিত রাজনৈতিক বক্তব্য পেশ এবং মসজিদেই সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়টা যেমন অনেক সাধারণ মুসলমান মেনে নিতে পারছেন না, তেমনই এই ওয়াকফ সম্পত্তিটি দেখভালের জন্য যে কমিটি আছে, তারাও মেনে নিতে পারে নি বলে দাবি মোতোয়াল্লি মি. শাহর।
গত শুক্রবারও একটি সংবাদ সম্মেলন করতে মি. শাহ বাধা দিলে, তাঁকে শারীরিকভাবে নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ।
অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে শাহী ইমাম নুরুর রহমান বরকতি বলছেন এটা ‘চাচা-ভাতিজার ঝামেলা’, অল্প দিনেই মিটে যাবে।
তবে মসজিদ থেকে নিয়মিত যে রাজনৈতিক বার্তা তিনি দিয়ে থাকেন, তাতে কোনও ভুল তিনি করেন নি, এটাও বলছেন মি. বরকতি।
“কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে, গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে কথা বলে কোনও ভুল করি নি। আর এস এস এবং নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আমি মুখ খুলবই। তিন তালাক প্রথা হোক বা বাবরি মসজিদ ইস্যু – এগুলো নিয়ে কথা আমি বলবই। এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আর স্বাধীন ভারতে কথা বলার অধিকার তো আমার আছেই,” বলছিলেন টিপু সুলতান মসজিদের শাহী ইমাম মি. বরকতি।
মি. বরকতি সম্প্রতি ঘোষণা করেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখে কেউ যদি কালি লাগিয়ে দিতে পারে, তাকে ইনাম দেবেন তিনি।
কলকাতার এই প্রাচীন মসজিদের প্রধান ইমাম নিয়মিত রাজনৈতিক বার্তা দিলেও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ – নাখোদা মসজিদের ইমামরা কিন্তু রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
অন্যদিকে আরেকটি প্রখ্যাত ধর্মস্থান – ফুরফুরা শরিফের একাংশের সঙ্গেও রাজনীতিবিদদের – বিশেষত তৃণমূল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।
দিল্লির জামা মসজিদের শাহী ইমামকেও প্রকাশ্যেই রাজনৈতিক দলকে সমর্থন দিতে দেখা যায়।
কিন্তু ইমামদের সরাসরি রাজনৈতিক দলকে সমর্থন বা রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া যে অনুচিত, সেটা বলছেন মুসলমান সমাজেরই একাংশ।

সুত্রঃ বিবিসি বাংলা

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031