গতকাল রোববার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে । নির্বাচনে মোট ৩ হাজার ১শ ভোট পড়েছে। রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সভাপতি পদে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দল সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের এডভোকেট রতন কুমার রায়। তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় বিএনপি–জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদের এ এস এম বদরুল আনোয়ারের। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন নির্দলীয় প্যানেল হিসেবে পরিচিত সমমনা আইনজীবী সংসদের এডভোকেট মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির রাসেল। সাধারণ সম্পাদক পদে এগিয়ে রয়েছেন ঐক্য পরিষদের এডভোকেট মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। সমন্বয় পরিষদের এডভোকেট মোহাম্মদ আবু হানিফ পিছিয়ে রয়েছেন সামান্য ভোটে। এ অবস্থায় তিনি রাত ১টার দিকে সাধারণ সম্পাদক পদে আবারো ভোট গণনার আবেদন করেন। এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত (রাত দেড়টায়) পুনঃ গণনার প্রক্রিয়া চলছিল। এ পদে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন সমমনা আইনজীবী সংসদের সম্পাদক প্রার্থী এডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন।
প্যানেলভিত্তিক অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে সমন্বয় পরিষদের সিনিয়র সহ–সভাপতি কামরুন নাহার, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক জুবাইদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা ও তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মোহাম্মদ ফয়েজ উদ্দীন চৌধুরী এগিয়ে রয়েছেন।
ঐক্য পরিষদের প্রাথীদের মধ্যে সহ–সভাপতি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সহ–সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ হাসান আলী চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক মহিউদ্দিন হক চৌধুরী জুয়েল ও পাঠাগার সম্পাদক মো. আবদুল কাইয়ুম ভুঁইয়া এগিয়ে রয়েছেন।
সমমনা আইনজীবী সংসদের প্রার্থীদের মধ্যে সিনিয়র সহ–সভাপতি মোহাম্মদ আলী সামান্য ভোটে পিছিয়ে রয়েছেন। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন না গণতান্ত্রিক সমিতির ব্যানারে নির্বাচনের অংশগ্রহণকারী অর্থ সম্পাদক পদে মোহাম্মদ মোশারেফ হোসেন, সম্পাদকীয় পদে একমাত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে মাসুদুল আলম বাবু।
এদিকে ১০টি নির্বাহী সদস্যপদে ভোট গণনা শেষে রাত দেড়টা পর্যন্ত ফলাফল ঘোষণা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এবার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক পদসহ গুরুত্বপূর্ণ ৯ টি সম্পাদকীয় পদের জন্য ২৫ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। অপরদিকে ১০ টি নির্বাহী সদস্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ২২ প্রার্থী। সম্পাদকীয় ও সদস্যপদসহ ১৯ পদে মোট ৪৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন।
এর মধ্যে সমন্বয় পরিষদ ও ঐক্য পরিষদ ১৯ টি পদের সবকটিতে প্রার্থী দিয়েছে। সমমনা সংসদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকপদসহ ৫ টি সম্পাদকীয় পদ ও একটি নির্বাহী সদস্য পদে প্রার্থী দিয়েছে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি প্রথমবারের মতো প্রার্থী দিয়েছে। এ প্যানেল অর্থ সম্পাদক পদ ও সদস্যপদে একজন করে প্রার্থী দেয়। এছাড়া সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদিকে, এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় গঠণতন্ত্র মতে ব্যাপক নজরদারি চলেছে। এবারই প্রথম পোস্টার, ফেস্টুন, মিছিল–ৗোগান নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি প্যানেলগুলো এককভাবে নির্বাচনী পরিচিতি সভার বদলে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তদারকিতে যৌথভাবে প্যানেল পরিচিতি করে। কয়েকদিন আগে একই মঞ্চে, একই সময়ে অনুষ্ঠিত ওই পরিচিতি সভায় নিজ নিজ প্যানেলের পক্ষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া একক প্যানেল পরিচিতি সভায় সব ধরণের খাবার বা প্যাকেট প্রদান নিষিদ্ধ করে সমিতি। মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা ফেরদৌছ আহমদের নেতৃত্বে সমিতির ৫ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচনী কর্মকর্তাগণ কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘণ করছেন কি না তার প্রতি কঠোর নজরদারি করেছেন বলে জানান নির্বাচনী কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী।
আইনজীবী সমিতির ১২৫ বছরের ইতিহাসে এ প্রথম বেশ কয়েকটি নতুনত্ব ও কড়াকড়ি আরোপের মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভোটাররাও।
নির্বাচন কমিশনের ৫ সদস্য হচ্ছেন, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট ফেরদৌছ আহমেদ, এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী, এডভোকেট মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী, সাবেক সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহ ও এডভোকেট এনামুল হক।