বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ পদ্মাসেতু প্রকল্পে নিয়ে যারা চক্রান্ত করেছিল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করেন । তিনি বলেন, ‘এই দেশে কিছু লোক আছে যারা উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে। পদ্মাসেতু নিয়ে তারা বাধা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্ব এবং সৎ সাহসের কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি।’
রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ নাকচ করার রায় প্রকাশের পরদিন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তোফায়েল আহমেদ।
২০১০ সালে দেশের বৃহত্তম এই সেতু প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে আগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ গিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন আগেই এই অভিযোগ তদন্ত করে তা গ্রহণ না করলেও এই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। তবে প্রায় সাত বছর পর গত শুক্রবারা কানাডার একটি আদালতের রায় প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে বিভ্রান্তি পুরোপুরি কেটে যায়।
বিচারক বলেছেন, পদ্মাসেতুকে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ গালগপ্প। শোনা কথার ভিত্তিতে এই অভিযোগ আনা হয়েছিল।
অথচ বিশ্বব্যাংকের এই অভিযোগের কারণে কার্যত পাঁচ বছর পিছিয়ে যায় এখন পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি। পদত্যাগ করেন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তবে ভীষণ চাপে পড়েও নিজ অর্থে সেতুর কাজ এগিয়ে নেয় সরকার।
কানাডার আদালতের রায় প্রকাশের পর সরকারের সমালোচকরা অনেকটাই চুপসে গেছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, কানাডার আদালতে কী প্রমাণ হয়েছে সেটা তাদের বিবেচনা বিষয় নয়। এই সেতু নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল আর তারা সেটা নিয়েই বলেছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, এই সেতু প্রকল্প নিয়ে অভিযোগ করায় বিশ্বব্যাংককে এখন প্রশ্ন করা উচিত। তবে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটিকে দায়মুক্তি দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের এই অভিযোগ তোলার পেছনে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনুসকে দায়ী করেছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রীও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ইউনুস পদ্মাসেতু প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করিয়ে ছিলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পদ্মাসেতু নিয়ে দুর্নীতি ষড়যন্ত্রের নামে কলঙ্কের বোঝা চাপানো হয়েছিল। যেখানে কিছু লোক ষড়যন্ত্র করেছেন। এক্ষেত্রে নোবেল জয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস, আমেরিকার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের নাম এসেছে। এছাড়া এ মিথ্যা অপবাদের সঙ্গে কিছু টকশো বিশেষজ্ঞ সুর মিলিয়েছেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সুরে বলব, এদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। তবে এটা সরকারে এখনো আলোচনা হয়েনি। এটি তো আলোচনার বিষয়। তবে তারা যে অন্যায় কাজ করেছে এজন্য দেশের মানুষ তাদের ধিক্কার দেবে। ঘৃণা করবে। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় শাস্তি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মাসেতু হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালে। এখন এটি ২০১৮ সালে শেষ হবে। আমরা যে এতোদিন পিছিয়ে গেছি। এতে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এই সেতু হলে প্রতি বছর আমাদের জিডিপিতে ২ শতাংশ যোগ হতো। সেটি থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যায়ের কাছে মাথানত করবেন না। যে কারণে তিনি নিজ অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ শুরু করেছেন।
পদ্মাসেতু নিয়ে চক্রান্তকারীরা এখন আবার বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে চক্রান্ত করছে বলেও মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ। বলেন, শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করছেন। তিনি কখনও পিছু হটবেন না।