সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক সময় বিশ্বের অন্যতম একটি সেরা বাহিনীতে রূপান্তরিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন । তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সেনাবাহিনীর উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নে বিশ্বাসী। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সেনাবাহিনী ফোর্সেস গোল-
২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সিলেটে ১৭ পদাতিক ডিভিশন, রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের নিরাপত্তা ও তদারকির জন্য ১টি কম্পোজিট ব্রিগেড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত সুরক্ষিত করতে রেবুখালিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে আরো একটি ডিভিশন। যার কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এছাড়াও সেনাবাহিনীতে অনেক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে।
সেনাপ্রধান গতকাল কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে কক্সবাজার এরিয়ায় নবপ্রতিষ্ঠিত ৭টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন শেষে এসব কথা বলেন। ইউনিটগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪০৯ ডিভিশন অর্ডন্যান্স কোম্পানি, ৯ সিগন্যাল ব্যাটালিয়ন, ৪১ মিডিয়াম রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ১৬ ক্যাভালরি, এরিয়া সদর দপ্তর কক্সবাজার, ৩৯ বাংলাদেশ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্ট ও ১০ স্বতন্ত্র অ্যামিউনেশন প্লাটুন।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ২৮শে অক্টোবর ১০ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৫ সালের ১লা মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ডিভিশনের পতাকা উত্তোলন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২য় পর্যায়ে ২টি ব্রিগেডসহ ৭টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ ডিভিশনকে আরো পরিপূর্ণতা দিতে ৩য় পর্যায়ে এরিয়া সদর দপ্তরসহ আরো ৭টি ইউনিট গঠিত হলো। তারা জানান, ১০ পদাতিক ডিভিশন সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার দৃঢ় প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এদিকে গতকাল সেনাবাহিনী প্রধান অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান তাকে অভ্যর্থনা জানান। এরপর প্যারেড কমান্ডার মেজর এরশাদ হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করে এবং সেনাপ্রধানকে সালাম জানান। পরে সেনাপ্রধান রামু সেনানিবাসের নির্মাণাধীন স্মৃতির ধারক ‘শেকড়’ নামে দশ দিগন্ত জাদুঘরসহ বিবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের উদ্বোধন করেন। পতাকা উত্তোলন শেষে সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। এসময় তিনি বলেন, ২ বছর আগে আজকের মতোই এক সকালে ১০ পদাতিক ডিভিশনের বর্ণিল পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান হয়েছিলো। তখন এখানে পাহাড়, জঙ্গল আর বনভূমি ছিল। মাত্র ২ বছর পর এই নবগঠিত গ্যারিসন নয়নাভিরাম সবুজ শ্যামল রূপে পরিণত হয়েছে। ডিভিশনের জিওসিসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, রামু সেনানিবাসের মধ্যে বরাবর নির্মিত বীর সরণী একটি অনবদ্য সৃষ্টি। এর দুই প্রান্তে নির্মিত ২টি প্রধান ফটক অর্থাৎ এলিফেন্ট গেট এবং শিল্ড গেট অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দনভাবে স্থাপিত হয়েছে। অজেয় নামে আপনারা যে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছেন তা অত্যন্ত অর্থভাবাপন্ন। তিনি বলেন, এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক, অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে। রামু সেনানিবাসের উন্নয়ন এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নতুন আশা জাগাচ্ছে এবং আপনাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা বেড়েছে। সেনানিবাসের বিভিন্ন  দিক তুলে ধরে জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বলেন, এ ফরমেশনের প্রশিক্ষণের মান অত্যন্ত উন্নত। আপনাদের প্রশিক্ষণের সুবিধার্থে ফায়ারিং রেঞ্জ এবং গ্রেনেড ফায়ারিং রেঞ্জের নির্মাণকাজ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে। অ্যাসল্ট কোর্স গ্রাউন্ড, র‌্যাপলিং টাওয়ার এবং ফানপার্কও স্থাপিত হয়েছে। তিনি বলেন, এই ফরমেশনের উদ্ভাবিত কমান্ড রান, প্রত্যেক ইউনিটের থিম সং এবং নতুন কিছু উদ্ভাবনের সদা প্রচেষ্টা আমাকে সত্যিই অভিভূত করেছে। সেনাপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এদেশের সম্পদ। দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের মূর্ত প্রতীক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাংবিধানিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠন এবং বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছে। তিনি বলেন, তাই পেশাগত ঈপ্সিত মান অর্জনের জন্য আপনাদের সকলকে পেশাগতভাবে দক্ষ, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সৎ এবং মঙ্গলময় জীবনের অধিকারী হতে হবে। পবিত্র সংবিধান এবং দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। উপস্থিত সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি জানি আপনাদেরকে বর্তমানে অস্থায়ী ব্যারাকে অবস্থান করতে হচ্ছে। এটা সাময়িক। আপনাদের জন্য স্থায়ী ব্যারাক তৈরির জন্য আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। আপনাদের জন্য ৪টি এসএম ব্যারাক কমপ্লেক্স তৈরির কাজ ইতিমধ্যে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। সেনাপ্রধান বলেন, সূচনাকারী হিসেবে আপনারা যারা এই নতুন ডিভিশন প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তারা এখন কষ্টসাধ্য সময় পার করলেও একদিন অনাবিল সৃষ্টি সুখের আনন্দের আস্বাদ পাবেন। আমার বিশ্বাস, এই ডিভিশনের প্রতিটি সদস্য পেশাগত দক্ষতার শিখরে সমাসীন হয়ে ১০ পদাতিক ডিভিশনকে অপারেশন, প্রশাসন এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের যে কোনো ক্ষেত্রে একটি অনুকরণীয় ডিভিশনে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর হবে। এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) তাদের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে,  সেনাপ্রধান এ ডিভিশনের উপর দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন যে, অত্র এলাকায় ১০ পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সার্বিক সামাজিক উন্নয়নের যে আকাঙ্ক্ষা সূচিত হয়েছে, তার সফল বাস্তবায়নে ১০ পদাতিক ডিভিশনের প্রতিটি সদস্য এগিয়ে আসবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে যাবেন। ১০ পদাতিক ডিভিশনের আরো কিছু নবগঠিত ইউনিটের নবযাত্রার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন রূপকল্প ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর বাস্তবায়নের পথে আরেকটি মাইলফলক উন্মোচিত হলো।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031