চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ সাম্প্রতিক বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গি নিহত ও আটকের পর পুলিশ প্রশাসনে অনেকটা স্বস্তি এসেছিল। এমনও বলা হচ্ছিল, জঙ্গিদের মূল শক্তি ও নেটওয়ার্ক ভেঙে দেয়া হয়েছে এর মধ্য দিয়ে। কিন্তু গত শুক্রবার গোপন বৈঠক থেকে ‘ইসলামি সমাজ’-এর ২৪ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের পর নতুন করে চিন্তিত হয়ে পড়েছে ।
গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাহাড়তলি এলাকার মৌসুমী আবাসিক এলাকার একটি ভবনে গোপন বৈঠককালে ইসলামি সমাজের ২৪ নেতাকর্মীকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ও স্পেশাল টাস্কফোর্স গ্রুপ (এসটিজি)।
তাদের মধ্যে ইসলামি সমাজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান দায়িত্বশীল নেতা মো. রহুল আমিন (৪৫) এবং টঙ্গী অঞ্চলের প্রধান দায়িত্বশীল নেতা মো. ইউছুফ আলীও (৪৬) রয়েছেন।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য থেকে পুলিশ মনে করছে, ২৪ নেতাকর্মী আটকের ঘটনায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে সংগঠনটি। আবার না-পাওয়া অনেক তথ্য নিয়ে নগর পুলিশের মধ্যে নতুন করে চিন্তা দেখা দিয়েছে বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ।
উপকমিশনার বলেন, ১৯৯৭ সালে জামায়াত নেতা আবদুল জব্বার ইসলামি সমাজ গঠনের পর তারা কুমিল্লার পাশাপাশি বান্দরবান, জামালপুর জেলায় সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করে। পরে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকার মধ্যে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট বান্দরবান ও জামালপুরে প্রকাশ্যে প্রচারপত্র বিলি করতে গিয়ে ধরা পড়ে ইসলামি সমাজের ১৫ নেতাকর্মী। ওই সময় ইসলামি সমাজকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর তারা বেশির ভাগ সময় গোপনেই কাজ করে। তবে মাঝে মাঝে গণমাধ্যমে তাদের কর্মসূচির বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি পাঠায়।
কিন্তু হঠাৎ করে চট্টগ্রামে তাদের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা থেকে পুলিশ ধারণা করছে, গণতন্ত্র বিরোধী আর ইসলামি খেলাফত কায়েমের আদর্শধারী ইসলামি সমাজ চট্টগ্রামকেই তাদের প্রধান ঘাঁটি হিসেবে বেছে নিয়েছে।
তবে চট্টগ্রামে তাদের কোনো আস্তানা আছে কি না, চট্টগ্রামে তাদের সদস্যসংখ্যা কত, সারা দেশে কতসংখ্যক সদস্য রয়েছে, সদস্যরা কোথাও জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিয়েছে কি না, অন্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কেমন, অর্থায়ন কারা করছে- এসব সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে তা চিন্তার কারণ হয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের।
সংগঠনটি সম্পর্কে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও স্পেশাল টাস্কফোর্স গ্রুপের (এসটিজি) কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন বলে জানান নগর পুলিশের উপকমিশনার পরিতোষ ঘোষ।
ইসলামি সমাজের সাম্প্রতিক তৎপরতা সম্পর্কে পরিতোষ বলেন, ইসলামি সমাজ গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পুরাতন রেলস্টেশনে দোয়া মাহফিল করেছে- এমন তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রামে তাদের আর কোনো সাংগঠনিক কর্মকা-ের তথ্য নেই। শুক্রবারের আটকের ঘটনায় নতুন করে সংগঠনটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহে মাঠে নেমেছ গোয়েন্দারা।