স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে একটি মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন । শিল্প ও মানব বর্জ্যেরে কারণে ঢাকার চারপাশের নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা পাল্টাতে হবে নগরবাসীর স্বার্থেই।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে চট্টগ্রামের ‘কর্ণফুলী নদীসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দুষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি সংক্রান্ত কমিটি’র সভায় এই নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঢা কাকে ক্লিন সিটি করতে হলে ঢাকার চারপাশের নদীসমূহের পানি দূষণমুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
ঢাকাকে ঘিরে থাকা চার নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গার অবস্থা একেবারেই করুণ। বিশেষ করে চামড়া শিল্পের অশোধিত বর্জ্য নদীর পানিকে পুঁতিগন্ধময় করে তুলেছে। পাশাপাশি নগরীর পয়ঃবর্জ্যের একাংশ সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। যাচ্ছে আবর্জনা এবং বিভিন্ন ভারী শিল্পের বর্জ্যও। এসব দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কোনো কোনো এলাকায় শূন্যে নেমে এসেছে বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণায় দেখা গেছে।
তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। দখল আর দূষণের কারণে এই নদীগুলোও মৃতপ্রায় হয়ে আছে। নানা সময় সরকার নদী রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিলেও তা তেমন কার্যকর প্রমাণ হয়নি।
তবে এই পরিস্থিতি পাল্টানোর সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। বলেন, ‘ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ফলে পানির স্তর প্রতিনিয়ত নীচে নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে নদীর পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে পাইপলাইনে সরবরাহ করা পানির ৮০ শতাংশ তোলা হয় মাটির নিচ থেকে। এ কারণে আমাদের পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। এই বিবেচনায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে ৮০ ভাগ পানি ভূ-উপরিস্থ উৎস হতে সরবরাহ করা হবে। এরপরও পানির যদি প্রয়োজন হয় তাহলে ২০ ভাগ ভূ-গর্ভস্থ উৎস থেকে সরবরাহ করা হবে। এজন্য মেগা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।’
মন্ত্রী জানান এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সারা দেশে তিন হাজার পুকুর খননে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হয়েছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী গঠিত এই কমিটি একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর মাস্টার প্ল্যান তৈরির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে কর্ণফুলী ও ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘কার্যকর মাস্টার প্ল্যান তৈরি ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা নদী উদ্ধারে প্রয়োজনে ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে সকলকে কাজ করতে হবে।’
সভায় নদীর স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নৌ-বাহিনী এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এই কমিটিতে গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়রকেও যুক্ত করার কথা বলা হয়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির হোসেন, নৌবাহিনীর প্রধান নিজামউদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) কবির বিন আনোয়ারসহ বিভিন্ন মিন্ত্রণালয়ের সচিব ও দপ্তরের প্রধানরা।